৬৫-৭০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন কাফির ও মূশরিকদেরকে বলেনঃ আমার সম্পর্কে তোমাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আমি তো তোমাদেরকে শুধু সতর্ককারী। আল্লাহ্, যিনি এক ও শরীক বিহীন, তিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউই নেই। তিনি একক। তিনি সব কিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান। সব কিছুই তার অধীনস্থ। তিনি যমীন, আসমান এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সব জিনিসেরই মালিক। সমস্ত ব্যবস্থাপনা তাঁরই হাতে। তিনি বড় মর্যাদাবান এবং মহা পরাক্রমশালী। তাঁর এই শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব এবং মহাপরাক্রম সত্ত্বেও তিনি মহা ক্ষমাশীলও বটে।মহান আল্লাহ্ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি বলঃ এটা এক মহা সংবাদ। তা হলো আল্লাহ্ তা'আলার আমাকে তোমাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করা। কিন্তু হে উদাসীনের দল! এরপরেও তোমরা আমার বর্ণনাকৃত প্রকৃত ও সত্য বিষয়গুলো হতে বিমুখ হয়ে রয়েছো! এটাও বলা হয়েছে যে, “এটা বড় জিনিস” দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেন, হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে আরো বলঃ “হযরত আদম (আঃ)-এর ব্যাপারে ফেরেশতাদের মধ্যে যে বাদানুবাদ হয়েছিল, যদি আমার কাছে অহী না আসতো তবে সে ব্যাপারে আমি কিছু জানতে পারতাম কি? ইবলীসের হযরত আদম (আঃ)-কে সিজদা না করা, মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে শয়তানের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং নিজেকে বড় মনে করা ইত্যাদির খবর আমি কি করে দিতে পারতাম?”হযরত মুআয (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ফজরের নামাযে আসতে খুবই বিলম্ব করেন। এমনকি সূর্যোদয়ের প্রায় সময় হয়ে আসে। অতঃপর তিনি খুব তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে আসেন। নামাযের ইকামত দেয়া হয় এবং তিনি খুব হালকাভাবে নামায পড়িয়ে দেন। সালাম ফিরানোর পর বলেনঃ “তোমরা যেভাবে আছ ঐ ভাবেই বসে থাকো।” তারপর আমাদের দিকে মুখ করে তিনি বলেনঃ “রাত্রে আমি তাহাজ্জুদের নামাযের জন্যে উঠেছিলাম। নামায পড়তে পড়তে আমাকে তন্দ্রা পেয়ে বসে। শেষ পর্যন্ত আমি জেগে উঠি এবং আমার প্রতিপালককে সুন্দর আকৃতিতে দেখতে পাই। তিনি আমাকে বলেন, “ঊর্ধ্বলোকে ফেরেশতারা এ সময় কি নিয়ে বাদানুবাদ করছে তা জান কি?” আমি উত্তর দিলামঃ হে আমার প্রতিপালক! না, আমি জানি না। এভাবে তিনবার প্রশ্ন ও উত্তর হলো। অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমার দুই কাঁধের মাঝে হাত রাখলেন। এমন কি আমি তাঁর অঙ্গুলীসমূহের শীতলতা অনুভব করলাম এবং এরপর আমার কাছে সব কিছু উজ্জ্বল হয়ে গেল। আবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “আচ্ছা, এখন বলতো, ঊর্ধ্বলোকে কি নিয়ে বাদানুবাদ হচ্ছে?” আমি উত্তরে বললামঃ গুনাহর কাফফারা সম্বন্ধে আলাপ আলোচনা চলছে। পুনরায় তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “বলতো কাফফারা (পাপ মোচনের পন্থা) কি কি?” আমি জবাব দিলামঃ জামাআতে নামায পড়ার জন্যে পা উঠিয়ে চলা, নামাযের পরে মসজিদে বসে থাকা এবং মনে না চাওয়া সত্ত্বেও পূর্ণভাবে অযু করা। মহান আল্লাহ্ আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কিভাবে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়?” আমি উত্তরে বললামঃ (দরিদ্রদেরকে) খাদ্য খেতে দেয়া, নম্রভাবে কথা বলা এবং রাত্রে যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন উঠে নামায পড়া। তখন আমার প্রতিপালক আমাকে বললেনঃ “কি চাইবে চাও।” আমি বললামঃ আমি আপনার কাছে ভাল কাজ করার, মন্দ কাজ পরিত্যাগ করার এবং দরিদ্রদেরকে ভালবাসার তাওফীক প্রার্থনা করছি। আর এই প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার প্রতি সদয় হবেন এবং যখন কোন কওমকে ফিত্নায় ফেলার ইচ্ছা করবেন, ঐ ফিতায় আমাকে না ফেলেই উঠিয়ে নিবেন। আর আমি আপনার কাছে আপনার মহব্বত, যে আপনাকে মহব্বত করে তার মহব্বত এবং এমন কাজের মহব্বত প্রার্থনা করছি যা আমাকে আপনার মহব্বতের নিকটবর্তী করে। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ “এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য। এটা তোমরা নিজেরা পড়বে ও অন্যদেরকে শিখাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এটা বিখ্যাত স্বপ্নের হাদীস। কেউ কেউ বলেন যে, এটা জাগ্রত অবস্থার ঘটনা। কিন্তু এটা ভুল কথা। সঠিক কথা এই যে, এটা স্বপ্নের ঘটনা)