৬২ নং আয়াতের তাফসীর:
যারা উম্মাতে মুহাম্মাদীর সৎ লোক, আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করতঃ শরীয়ত মোতাবেক আমল করে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল হিসেবে প্রেরণের পূর্বে যে সকল ইয়াহূদী-খ্রিস্টান ও সাবিয়ী তাদের স্বীয় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ও তাওহীদভিত্তিক ঈমান এনেছিল, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী ছিল এবং আল্লাহ তা‘আলা যে সকল আমল পছন্দ করেন সে অনুপাতে আমল করেছিল, তাদের সকলকে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত প্রদান করবেন। তাদের কোন ভয় ও চিন্তা থাকবে না। কিন্তু নাবী (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবী হিসেবে আগমনের পর কোন জাতির ধর্ম আল্লাহ তা‘আলা কবূল করবেন না। কেবল ইসলাম ছাড়া যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে এসেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللّٰهِ الْإِسْلَامُ)
“আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দীন (জীবন ব্যবস্থা) কেবল ইসলাম।”(সূরা আল-ইমরান ৩: ১৯)
صابئين ‘সাবিয়ী’দ্বারা কাদের বুঝানো হয়েছে এ সম্পর্কে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়।
কেউ কেউ বলেন: তারা ইয়াহূদীও নয়, খ্রিস্টানও নয়। অন্য একদল বলেন: তারা হল, যাদের কাছে নাবীর দাওয়াত পৌঁছেনি। আরেক দল বলেন: তারা কোন এক ধর্মের অনুসারী। তাদের কোন আমল, কোন কিতাব, কোন নাবী ছিল না কেবল এ কথা বলা ছাড়া যে, لا إله إلا اللّٰه আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
সঠিক কথা হচ্ছে তারা হল খ্রিস্টানদের একটি দল। (তাফসীরে সা‘দী ৩২পৃঃ)
এ আয়াতকে কেন্দ্র করে অনেকে বলে থাকে, সকল ধর্ম সমান। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয়, যে কোন ধর্মের অনুসরণ করলেই চলবে। এ দর্শন বিভ্রান্তিকর দর্শন। বরং সঠিক কথা হল তা-ই যা পূর্বে উল্লেখ করেছি- নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমনের পর সকল ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসরণ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ ج وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ)
“আর যে কেউ ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা তালাশ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবূল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৮৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুখের দাবি নয়, বরং প্রকৃত অবস্থা লক্ষণীয়। ইয়াহূদ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা যতই দাবি করুক যে তারা সঠিক ধর্মের অনুসারী তা কখনই সঠিক নয়। কারণ ইসলামের আগমনের পর সকল ধর্ম বাতিল।
২. যারা ইসলামে বিশ্বাসী হবে ও সৎ আমল করবে তাদের পরকালে রয়েছে মহাপুরষ্কার এবং তাদের কোন ভয়ও থাকবে না, কোন চিন্তাও থাকবে না।