You are reading a tafsir for the group of verses 2:58 to 2:59
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

৫৮-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর জিহাদের নির্দেশ ও তা অমান্য করণহযরত মূসা (আঃ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে যখন মিসরে আসেন এবং তাদেরকে পবিত্র ভূমিতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়, যা ছিল তাদের পৈত্রিক ভূমি ও তথায় তাদেরকে আমালুকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার নির্দেশ দেয়া হয়, তখন তারা কাপুরুষতা প্রদর্শন করে, যার শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে তীহের মাঠ নিক্ষেপ করা হয়। যেমন সূরা-ই- মায়েদায় বর্ণিত হয়েছে। (আরবি)-এর ভাবার্থ হচ্ছে বায়তুল মুকাদ্দাস। সুদ্দী (রঃ), রাবী (রঃ), কাতাদাহ্ (রঃ) এবং আবু মুসলিম (রঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ এটাই বলেছেন। কুরআন মাজীদের মধ্যে রয়েছে যে, হযরত মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বলেনঃ “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা পবিত্র ভূমিতে গমন কর যা তোমাদের ভাগ্যে লিখে দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা ‘আরীহা' নামক জায়গাকে বুঝান হয়েছে। আবার কেউ কেউ মিসরের কথা বলেছেন। কিন্তু এর ভাবার্থ “বায়তুল মুকাদ্দাস’ হওয়াই সঠিক কথা। এটা তীহ' হতে বের হওয়ার পরের ঘটনা। শুক্রবার সন্ধ্যার সময় আল্লাহ তা'আলা স্থানটি মুসলমানদের দ্বারা বিজিত করান। এমন কি তাদের জন্যে সূর্যকে কিছুক্ষণের তরে থামিয়ে দিয়েছিলেন, যেন তাদের বিজয় লাভ সম্ভব হয়ে যায়।বিজয়ের পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে নতশিরে উক্ত শহরে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) সিজদার অর্থ রুকু নিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, এখানে সিজদার অর্থ বিনয় ও নম্রতা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দরজাটি ছিল কিবলার দিকে। ওর নাম ছিল বাবুল হিত্তাহ। ইমাম রাযী (রঃ) একথাও বলেছেন যে, দরজার অর্থ হচ্ছে এখানে কিবলার দিক। সিজদার পরিবর্তে তারা জানুর ভরে যেতে আরম্ভ করে এবং পার্শ্বদেশের ভরে প্রবেশ করতে থাকে। মস্তক নত করার পরিবর্তে উচু করে। (আরবি)শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষমা। কেউ কেউ বলেন যে, এটা সত্যের নির্দেশ। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এতে পাপের স্বীকারোক্তি রয়েছে। হাসান (রঃ) এবং কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, এটার অর্থ হচ্ছেঃ “হে আল্লাহ! আমাদের ভুল ত্রুটিগুলো দূর করে দিন।”অতঃপর তাদের সাথে ওয়াদা করা হচ্ছে যে, যদি তারা এটাই বলতে বলতে শহরে প্রবেশ করে এবং বিজয়ের সময়েও বিনয় প্রকাশ করতঃ আল্লাহর নিয়ামত ও নিজেদের পাপের কথা স্বীকার করে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে এটা তাঁর নিকট খুবই প্রিয় বলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে সূরা-ই- (আরবি) অবতীর্ণ হয়। এর মধ্যেই এ নির্দেশ দেয়া হয়ঃ “যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং তুমি জনগণকে দেখবে যে তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করছে, তখন তুমি তোমার প্রভুর তাসবীহ পাঠ ও প্রশংসা কীর্তন করবে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী।” এ সূরার মধ্যে যেন যিক্র ও ক্ষমা প্রার্থনার বর্ণনা রয়েছে, তেমনই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নশ্বর জগত হতে বিদায় গ্রহণের ইঙ্গিত রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত উমারের (রাঃ) সামনে এ ভাবার্থও বর্ণনা করেছিলেন এবং তা তিনি খুব পছন্দ করেছিলেন।মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন শহরে প্রবেশ করেন, তখন অত্যন্ত বিনয় ও দারিদ্র তার উপর বিরাজ করছিল। তিনি স্বীয় মস্তক এত নীচু করেছিলেন যে, তার উন্ত্রীর জিনে ঠেকে গিয়েছিল। শহরে প্রবেশ করেই তিনি প্রথম প্রহরের আট রাকআত নামায আদায় করেন। ওটা ‘যুহা’র নামায ছিল এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশক নামাযও বটে। দুটোই মুহাদ্দিসগণের কথা।হযরত সা'দ বিন আবি ওক্কাস (রাঃ) ইরান দেশ বিজয়ের পর যখন কিসরার শাহী প্রাসাদে পৌছেন, তখন তিনিও সেই সুন্নাত অনুযায়ী আট রাকআত নামায আদায় করেন। এক সালামে দুই রাকআত করে পড়া কারও কারও মাযহাবে আছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, একই সালামে আট রাকআত পড়তে হবে। আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।সহীহ বুখারী শরীফে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বানী ইসরাঈলকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তারা যেন সিজদা করা অবস্থায় ও (আরবি) বলতে বলতে দরজায় প্রবেশ করে। কিন্তু তারা তা পরিবর্তন করে ফেলে এবং জানু ভরে ও (আরবি)বলতে বলতে চলতে থাকে। সুনান-ই-নাসাঈ, মুসনাদ-ই-আবদুর রাযযাক, সুনান-ই-আবি দাউদ, সহীহ মুসলিম এবং জামেউত ক্রিমিযীর মধ্যেও শব্দের বিভিন্নতার সঙ্গে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। এর সনদ বিশুদ্ধ। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে চলছিলাম। যাতল হানযাল' নামক ঘাঁটির নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ বলেনঃ “এ ঘাঁটির দৃষ্টান্ত বানী ইসরাঈলের সেই দরজার মত যেখান দিয়ে তাদেরকে নতশিরে এবং (আরবি) বলতে বলতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ও তাদেরকে তাদের পাপ ক্ষমা করে দেয়ার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল।” হযরত বারআ’ (রঃ) বলেন যে, (আরবি) (২:১৪২) নির্বোধ ইয়াহুদীগণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর কথা পরিবর্তন করেছিল। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, (আরবি)-এর পরিবর্তে তারা (আরবি) বলেছিল। তাদের নিজের ভাষায় ওটা ছিল (আরবি) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাদের এ পরিবর্তনকে বর্ণনা করেন যে, নতশিরে চলার পরিবর্তে তারা জানুর ভরে এবং (আরবি)এর পরিবর্তে (আরবি) (গম) বলতে বলতে চলছিল। হযরত আতা' (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), যহহাক (রঃ), হাসান বসরী (রঃ), রাবী' বিন আনাস (রঃ), কাতাদাহ (রঃ) এবং ইয়াহইয়াও (রঃ) এটাই বর্ণনা করেছেন। ভাবার্থ এই যে, তাদেরকে যে কথা ও কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা উপহাস করে উড়িয়ে দিয়েছিল, যা ছিল প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণ। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি শাস্তি অবতীর্ণ করেন। তিনি বলেনঃ “আমি অত্যাচারীদের উপর তাদের পাপের কারণে আসমানী শাস্তি অবতীর্ণ করেছি।" কেউ বলেছেন অভিশাপ, আবার কেউ বলেছেন মহামারী।একটি মারফু হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মহামারী একটি শান্তি। ওটা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা শুনবে যে, অমুক জায়গায় মহামারী আছে তখন তোমরা তথায় যেয়ো না।” তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এটা দুঃখ, রোগ এবং শাস্তি, যা দ্বারা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল।”