undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

পূর্বের আয়াতে মহান আল্লাহ ঐ দলীলসমূহ বর্ণনা করেছিলেন যা স্বয়ং মানুষের মধ্যে রয়েছে। এখন আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াতে ঐ দলীলসমূহের বর্ণনা দিচ্ছেন যা দৈনন্দিন মানুষের চোখের সামনে ভাসছে (আরবি) শব্দটি এখানে ইচ্ছা করা ও মনঃসংযোগ করা অর্থে এসেছে। কেননা এর (আরবি) এসেছে (আরবি) এবং (আরবি)-এর অর্থ হচ্ছে ঠিক করা এবং নির্মাণ করা (আরবি) শব্দটি (আরবি)-অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলছেন যে, প্রত্যেক জিনিস সম্বন্ধে তাঁর জানা আছে। যেমন তিনি অন্যত্র বলেছেনঃ “যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না?” এ আয়াতটির ব্যাখ্যা যেন সূরা-ই- হা-মীম আস্ সিজদাহর এ আয়াতটিঃ “ (হে নবী সঃ!) তুমি বলে দাও, তোমরা কি এমন আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস করছ, যিনি যমীনকে দু’দিনে সৃষ্টি করেছেন, আর তোমরা তার শরীক সাব্যস্ত করছ তিনিই সারা বিশ্বের প্রতিপালক। আর তিনি যমীনের, তার উপরিভাগে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন, আর তাতে চার দিনে তার অধিবাসীবৃন্দের খাদ্যসমূহের ব্যবস্থা করেছেন, এটা জিজ্ঞাসুগণের জন্যে পূর্ণ (বর্ণনা)। অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনোনিবেশ করলেন, আর তা (তখন) ধূম্রবৎ ছিল, তিনি তাকে এবং যমীনকে বললেন-তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় (আমীর নির্দেশ শিরোধার্য করে নিতে) এস; তখন উভয়ে বললো আমরা সানন্দে (উক্ত আদেশাবলীর জন্যে) প্রস্তুত রয়েছি। অতঃপর দু'দিনে আল্লাহ সাতটি আকাশ সৃষ্টি করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার কাজ ভাগ করে দিলেন এবং দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সুশশাভিত করলেন এবং তাকে রক্ষার ব্যবস্থা করলেন। এটা তাঁরই নির্ধারিত পরিমাণ, যিনি মহাপরাক্রান্ত জ্ঞানময়।” সৃষ্টিসমূহের বিন্যাসঃএ আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, মহান আল্লাহ প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর সাতটি আকাশ নির্মাণ করেছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অট্টালিকা নির্মাণের এটাই নিয়ম যে, প্রথমে নির্মাণ করা হয় নীচের অংশ এবং পরে উপরের অংশ। মুফাসসিরগণ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা ইনশাআল্লাহ এখনই আসছে। কিন্তু এটা বুঝে নেয়া উচিত যে, আল্লাহ পাক অন্য স্থানে বলেছেনঃ “আচ্ছা! তোমাদেরকে সৃষ্টি করাই কি কঠিন কাজ, নাকি আসমান? আল্লাহ ওটা (এরূপে) নির্মাণ করেছেন যে, ওর ছাদ উঁচু করেছেন এবং ওকে সঠিকভাবে নির্মাণ করেছেন। আর ওর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং ওর দিনকে প্রকাশ করেছেন। আর এরপর জমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন। তা হতে পানি ও তৃণ বের করেছেন এবং পর্বতসমূহ স্থাপন করেছেন। (তিনি এ সব কিছু করেছেন) তোমাদের ও তোমাদের পশুগুলোর উপকারের জন্যে।” এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি আকাশের পরে যমীন সৃষ্টি করেছেন। কোন কোন মনীষী তো বলেছেন যে, উপরের আয়াতটিতে (আরবি) শুধু (আরবি)-এর জন্যে এসেছে, (আরবি)-এর জন্যে নয়। অর্থাৎ ভাবার্থ এই নয় যে, যমীনের পরে আকাশের সৃষ্টি কার্য আরম্ভ করেছেন, বরং উদ্দেশ্য শুধু সংবাদ দেয়া যে, আকাশসমূহও সৃষ্টি করেছেন এবং জমীনও সৃষ্টি করেছেন। আরব কবিদের কবিতায় এ দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, কোন কোন স্থলে (আরবি) শুধুমাত্র খবর দেয়ার জন্যেই সংযুক্ত হয়ে থাকে-“আগে ও পরে’ উদ্দেশ্য হয় না।কেউ কেউ বলেছেন যে, পরবর্তী আয়াতটিতে আসমানের সৃষ্টির পরে যমীন বিছিয়ে দেয়া ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে, সৃষ্টি করা নয়। তাহলে ঠিক আছে যে, প্রথমে যমীন সৃষ্টি করেছেন, পরে আসমান। অতঃপর যমীনকে ঠিকভাবে সাজিয়েছেন। এতে আয়াত দুটি পরস্পর বিরোধী আর থাকলো না। এ দোষ হতে মহান আল্লাহর কালাম সম্পূর্ণ মুক্ত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ অর্থই করেছেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং আরও কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার আরশ পানির উপরে ছিল। এর পূর্বে তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। অতঃপর যখন তিনি অন্যান্য জিনিস সৃষ্টি করার ইচ্ছে করেন, তখন তিনি পানি হতে ধূম্র বের করেন এবং সেই ধূম্র উপরে উঠে যায়। তা হতে তিনি আকাশ সৃষ্টি করেন। তারপর পানি শুকিয়ে যায় এবং ওকে তিনি যমীনে পরিণত করেন। এবং পরে পৃথক পৃথকভাবে সাতটি যমীন করেন। রোববার ও সোমবার এই দু’দিনে সাতটি যমীন নির্মিত হয়। যমীন আছে মাছের উপরে, মাছ ওটাই যার বর্ণনা কুরআন মাজীদের (আরবি) এই আয়াতটিতে রয়েছে। মাছ আছে পানির উপরে, পানি আছে, সাফাতের পিঠের উপর এবং সাফাত আছে ফেরেশতার পিঠের উপর এবং ফেরেশতা আছেন পাথরের উপর, এটা ঐ পাথর, যার বর্ণনা হযরত লোকমান করেছেন। পাথরটি আছে বাতাসের উপর, আসমানেও নেই এবং যমীনেও নেই। যমীন কাঁপতে থাকলে আল্লাহ তার উপর পাহাড় স্থাপন করেন, তখন তা থেমে যায়। আল্লাহ তাআলার এ কথার অর্থ এটাইঃ “আমি ভূ-পৃষ্ঠে পর্বতমালা স্থাপন করেছি, যেন তা তাদেরকে নিয়ে টলমল করতে না পারে। পাহাড়, যমীনে উৎপাদিত শস্য এবং যমীনের প্রত্যেকটি জিনিস মঙ্গল ও বুধ এই দুদিনে সৃষ্টি করেন। এরই বর্ণনা পূর্বে বর্ণিত আয়াতটিতে রয়েছে। অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনোনিবেশ করেন। ওটা ছিল ধূম্র।। অতঃপর তা হতে সাতটি আকাশ নির্মাণ করেন। এটা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই দু'দিনে নির্মিত হয়। শুক্রবার আকাশ ও পৃথিবীর নির্মাণ কার্য জমা হয়েছিল বলে তাকে জুমআ বলা হয়েছে।আকাশে তিনি ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করেন-যার জ্ঞান তিনি ছাড়া আর কারও নেই। দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সুশোভিত করেন এবং ওগুলোকে শয়তান হতে নিরাপত্তা লাভের মাধ্যম বানিয়ে দেন। এসব সৃষ্টি করার পর বিশ্বপ্রভু আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হন। যেমন তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তিনিই যিনি আসমানসমূহ ও জমীনকে এবং ঐ সমুদয় বস্তুকে, যা এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে, ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হন।" জগত সৃষ্টির মোট সময়ঃতাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে-হযরত আবদুল্লাহ বিন সাঈদ (রাঃ) বলেন যে, রোববার হতে মাখলুকের সৃষ্টিকার্য আরম্ভ হয়। দুদিনে সৃষ্টি করা হয় যমীন, দু’দিনে যমীনের সমস্ত জিনিস এবং দু’দিনে আসমান সৃষ্টি করা হয়। শুক্রবারের শেষাংশে আসমানের নির্মাণ কার্য শেষ হয়। ঐ সময়েই হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয় এবং ঐ সময়েই কিয়ামত সংঘটিত হবে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, মহান আল্লাহ পৃথিবীকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টি করেছেন। ওটা হতে যে ধোঁয়া উপরের দিকে উঠেছে তা হতে আকাশ নির্মাণ করেন-যা একটির উপর আর একটি এভাবে সাতটি এবং যমীনও একটির নীচে আরেকটি এভাবে সাতটি। এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, পৃথিবীকে আকাশের পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন সূরা-ই-সিজদাহর মধ্যে রয়েছে। আলেমগণ এ বিষয়ে একমত। শুধুমাত্র কাতাদাহ্ (রঃ) বলেন যে, আকাশ যমীনের পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে। কুরতুবী (রঃ) এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। (আরবি)-এর আয়াতকে সামনে রেখে ইনি বলেন যে, আকাশের সৃষ্টির বর্ণনা পৃথিবীর পূর্বে রয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফে আছে, হযরত আব্বাস (রাঃ) এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন যে, যমীন তো আকাশসমূহের পূর্বে সৃষ্ট হয়েছে, কিন্তু বিছানো হয়েছে পরে। সাধারণ আলেমদেরও উত্তর এটাই। সুরা-ই- (আরবি)-এর তাফসীরেও ইনশাআল্লাহ এর বর্ণনা দেয়া হবে। ফলকথা এই যে, যমীন বিছানো হয়েছে পরে। কুরআন মাজীদের মধ্যে (আরবি) শব্দটি আছে এবং এর পরে পানি , চারা, পাহাড় ইত্যাদির বর্ণনা আছে। এ শব্দটির ব্যাখ্যা যেন নিম্নরূপঃ মহান আল্লাহ যে যে জিনিসের বৃদ্ধির ক্ষমতা এই যমীনে রেখেছিলেন, ঐ সবকে প্রকাশ করে দিলেন এবং এর ফলে বিভিন্ন আকারের ও বিভিন্ন শ্রেণীর উৎপাদন রেরিয়ে আসলো। এভাবেই আকাশেও স্থির ও গতিশীল তারকারাজি ইত্যাদি নির্মাণ করলেন।সহীহ মুসলিম ও সুনান-ই-নাসাঈতে হাদীস আছে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার হাত ধরে বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা মাটি সৃষ্টি করেছেন শনিবারে, পাহাড় রোববারে, বৃক্ষরাজি সোমবারে, খারাপ জিনিসগুলো মঙ্গলবারে, আললা বুধবারে, জীবজন্তু বৃহস্পতিবারে এবং হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন শুক্রবারে আসরের পর সেই দিনের শেষ সময়ে আসরের পর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত।” এ হাদীসটি ‘গারাইব-ই-মুসলিম’ এর মধ্যে রয়েছে। ইমাম ইবনে মাদীনী (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ এর বিরূপ সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা হযরত কাবের (রাঃ) নিজস্ব উক্তি এবং হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হযরত কাবের (রাঃ) একথা শুনেছেন এবং কতক বর্ণনাকারী একে ভুলবশতঃ মারফু হাদীস হিসেবে ধরে নিয়েছেন। ইমাম বায়হাকী (রঃ) এটাই বলেন।