১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
যখন মুনাফিকদেরকে বলা হয় মানুষেরা তথা সাহাবীরা যেমন ঈমান এনেছে অনুরূপ ঈমান আন। তখন তারা জবাবে বলে আমরা কি নির্বোধদের মত ঈমান আনব?
এখানে নির্বোধ দ্বারা সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কারণ অধিকাংশ সাহাবীরা সমাজের বিত্তশালী ও প্রভাবশালী ছিলেন না। যেমন রোম সম্রাট হিরাকল আবূ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিল: সমাজের সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তিরা কি তাঁর (মুহাম্মাদের) অনুসরণ করে, না দুর্বল গরীবরা? জবাবে তিনি বলবেন: গরীবরা। সে বলল: নাবীদের অনুসারী এরূপ ব্যক্তিরাই হয়ে থাকে। (সহীহ বুখারী হা: ০৭)
বর্তমান সমাজের দিকেও তাকালে দেখা যায়, সমাজের অধিকাংশ দুর্বল-গরীবরাই ইসলামের অনুসারী, ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলার চেষ্টা করে থাকে। আর প্রভাব ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের অধিকাংশই ধর্মের পরওয়া করে না এবং ধর্মপ্রাণ মু’মিন মুসলিমদেরকে অবজ্ঞা করে চলে। যেমন চরিত্র ছিল তৎকালীন মুনাফিকদের। মূলতঃ ইসলাম হল অসহায় ও অসচ্ছল লোকেদের সহায়তা প্রদানকারী, নির্যাতিতদের আশ্রয় প্রদানকারী ধর্ম। এজন্য সর্বযুগে সুবিধা বঞ্চিত লোকেরাই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়।
তাই সাহাবী বা সহজ-সরল মু’মিনদেরকে বোকা ও মানহানিকর কথা বলা ঈমানদারদের কাজ নয় রবং এটা মুনাফিকদের কাজ। এরূপ করলে ঈমান বাতিল হয়ে যাবে।
السفهاء শব্দটি سفيه শব্দের বহুবচন। অর্থ হল অজ্ঞ, নির্বোধ, দুর্বল। এজন্য মহিলা ও বাচ্চাদেরকে سفيه বা অবুঝ বলা হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَا۬ءَ أَمْوَالَكُمُ)
“তোমরা তোমাদের সম্পদ অবুঝ ব্যক্তিদেরকে দিও না।” (সূরা নিসা ৪:৫) অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবুঝ সন্তান ও নারীদের দিও না। এখান থেকে আরো জানতে পারলাম ঈমান আনতে হবে সাহাবীরা যেভাবে ঈমান এনেছেন। তাদের ঈমান হল পরবর্তী সকল মানুষের ঈমানের মাপকাঠি। সাহাবীদের ঈমানের মাঝে কোন তরীকা, পীর-ফকির ও ভায়া-মাধ্যম ছিল না। তারা সরাসরি আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সমাজের অধিকাংশ দুর্বল, গরীব সুবিধা বঞ্চিত ব্যক্তিরাই ইসলামের অনুসারী হয়।
২. সমাজের প্রভাব ও বিত্তশালী ব্যক্তিরা দুর্বল ও গরীব মু’মিনদেরকে অনেকভাবে উপহাস করতে পারে। তাই বলে মনক্ষুন্ন হয়ে ইসলাম থেকে সরে যাওয়া যাবে না। তৎকালীন মক্কার প্রভাব ও বিত্তশালী কাফিররাও দুর্বল সাহাবীদেরকে বিভিন্ন কথা বলে উপহাস করত, তারপরও তারা ইসলাম থেকে এক চুলও সরে যায়নি।