undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

৮২ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতে কিয়ামতের পূর্বে কিয়ামতের নির্দশন হিসেবে একটি জন্তু ভূগর্ভ হতে বের হবে সে কথাই বলা হচ্ছে যে, যখন আল্লাহ তা‘আলার কথা অনুপাতে শাস্তি এসে পড়বে ঠিক তখনই আল্লাহ তা‘আলা ভূগর্ভ হতে একটি প্রাণী নির্গত করবেন যা মানুষের সাথে কথা বলবে। যেমন হাদীসে এসেছে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা দশটি নিদর্শন দেখতে পাও। তা হল প্রথম, সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে, জন্তু (যা মানুষের সাথে কথা বলবে) এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশটি নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেন। (তিরমিযী হা: ২১৮৩, সহীহ)

সাহাবী আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ছয়টি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি আমল কর। সেগুলো হচ্ছে- পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয়, ধোঁয়া, দাজ্জাল, ভূ-প্রাণী, তোমাদের কারো মৃত্যু অথবা কিয়ামত। (সহীহ মুসলিম হা: ৩২৮)

হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছেন কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ভূগর্ভ থেকে একটি জন্তু নির্গত হবে যা মানুষের সাথে কথা বলবে। আরো বুঝা যাচ্ছেন এ জীবটি সাধারণ জন্তুর মত প্রজনন প্রক্রিয়ায় হবে না বরং অকস্মাৎ জমিন ফুড়ে বের হবে।

ইমাম ইবনু কাসীর (رحمه الله) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন:

এখানে ভূ-প্রাণী আবির্ভাবের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা তখনই হবে যখন মানুষ ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করবে, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশাবলী বর্জন করবে এবং সত্য দীনকে বিকৃত করে ফেলবে। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে অলৌকিক প্রাণী বের করবেন এবং মানুষ তার সাথে কথা বলবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: ঘোষিত শাস্তি হবে আলেমদের মৃত্যবরণ করার মাধ্যমে, ইলম চলে যাওয়ার মাধ্যমে এবং কুরআন তুলে নেয়ার মাধ্যমে। তারপর তিনি বলেন: কুরআন তুলে নেয়ার পূর্বে বেশি বেশি তেলাওয়াত কর। শ্রোতাগণ বললেন: কুরআনের এসব পাণ্ডুলিপি তুলে নেয়া সম্ভব কিন্তু, মানুষের অন্তরে যা মুখস্ত রক্ষিত আছে তা কিভাবে তুলে নেয়া হবে। তিনি বললেন: একদা একটি রাত্রি অতিবাহিত করার পর যখন তারা সকালে উপনীত হবে তখন তাদের অন্তর কুরআন শূণ্য হয়ে যাবে। এমনকি তারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়াও ভুলে যাবে। তখন তারা জাহিলী যুগের কবিতা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আর তখনই তাদের ওপর ঘোষিত শাস্তি এসে যাবে। (তাফসীর কুরতুবী ১৩/২৩২)

ভূ-প্রাণীটির ধরন নির্ধারণে আলেমদের মাঝে মতামত পরিলক্ষিত হয়। ইমাম কুরতুবী  বলেন: তার একটি মত হল, প্রাণীটি সালেহ (عليه السلام)-এর উটের বাচ্চা। এ মতটিই অধিক সঠিক, এ মতের স্বপক্ষে তিনি প্রমাণ নিয়ে এসেছেন যা আবূ দাউদ আত তায়ালিসী হুযাইফা ইবনে উসাইদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। (তাফসীর কুরতুবী ১৩/২৩৫, মুসতাদরাক হাকেম ৪/৪৮৪, দুর্বল)

আব্দুল্লাহ বিন আমর (رضي الله عنه) বলেন: উক্ত প্রাণীটি হচ্ছে তামীম আদ দারী থেকে বর্ণিত দাজ্জালের ঘটনা সম্বলিত হাদীসে উল্লিখিত সংবাদবাহী প্রাণী। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।

পশুটির বের হওয়ার স্থান:

পশুটির বের হওয়ার স্থান নিয়ে আলিমদের মাঝে কিছু মতামত পরিলক্ষিত হয়। কেউ বলেছেন: পশুটি মক্কার বৃহৎ মসজিদ থেকে বের হবে।

আবার বলা হয় পশুটি তিনবার বের হবে। একবার কোন এক মরু এলাকায় বের হয়ে আবার লুকিয়ে যাবে। অতঃপর কোন এক জনবসতিতে বের হবে। সর্বশেষ মসজিদে হারামে বের হবে।

এ ছাড়াও আরো উক্তি রয়েছে, তবে অধিকাংশ উক্তিগুলোই প্রমাণ করে তা মক্কা মুকাররামা থেকে বের হবে। (আত তাযকিরাহ পৃ: ৬৯৭-৬৯৮, ইশাআহ পৃ: ১৭৬-১৭৭)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কিয়ামতের পূর্বে একটি বিশেষ জন্তু মানুষের সাথে কথা বলবে।

২. কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে।