undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

যে জীবের বর্ণনা এখানে দেয়া হয়েছে তা শেষ যুগে প্রকাশিত হবে যখন মানুষ আল্লাহর দ্বীনকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করবে। যখন তারা সত্য দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলবে। কেউ কেউ বলেন যে, এটা মক্কা শরীফ হতে বের হবে। আবার অন্য কেউ বলেন যে, এটা অন্য স্থান হতে বের হবে। এর বিস্তারিত বিবরণ এখনই আসবে ইনশাআল্লাহ্। সে বাকশক্তি সম্পন্ন হবে এবং বলবে যে, মানুষ আল্লাহর নিদর্শনসমূহে অবিশ্বাসী। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। কিন্তু এই উক্তি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। হযরত ইবনে। আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, এটা তাদেরকে আহত করবে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, উভয়েই এটা করবে, অর্থাৎ এও করবে এবং এও করবে। এটা খুবই চমৎকার উক্তি। এই উক্তি দু'টির মধ্যে কোনই বৈপরীত্য নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।‘দাব্বাতুল আর’ সম্বন্ধে যেসব হাদীস ও আসার বর্ণিত আছে, এগুলোর কিছু কিছু আমরা এখানে বর্ণনা করছি। এ ব্যাপারে আমরা আল্লাহ তাআলার নিকটই সাহায্য প্রার্থী। হযরত হুযাইফা ইবনে উসায়েদ গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) আরাফা হতে আমাদের নিকট আগমন করেন। আমাদেরকে এই আলোচনায় লিপ্ত দেখে বলেনঃ “কিয়ামত ঐ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত তোমরা দশটি নিদর্শন দেখতে পাবে। ওগুলো হলো- পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া, ধূম্র, দাব্বাতুল আর ও ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়া। হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর আগমন ঘটা, দাজ্জাল বের হওয়া, পূর্বে, পশ্চিমে ও আরব উপদ্বীপে তিনটি খাসফ (মাটিতে প্রোথিত হওন) হওয়া এবং আদন হতে এক আগুন বের হওয়া যা লোকদেরকে চালনা করবে বা তাদেরকে একত্রিত করবে। তাদের সাথেই রাত্রি কাটাবে এবং তাদের সাথেই দুপুরে বিশ্রাম করবে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত তালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) দাব্বাতুল আরযের উল্লেখ করে বলেনঃ “দাব্বাতুল আর তিনবার বের হবে। প্রথমবার বের হবে দূর-দূরান্তের জঙ্গল ও মরুপ্রান্তর হতে এবং ওর যিকর শহর অর্থাৎ মক্কায় প্রবেশ করবে। তারপর এক দীর্ঘ যুগ পরে দ্বিতীয়বার প্রকাশিত হবে এবং জনগণের মুখে এই কাহিনী কথিত হতে থাকবে, এমনকি মক্কায়ও এর প্রসিদ্ধি পৌছে যাবে। তারপর যখন জনগণ আল্লাহর সবচেয়ে মর্যাদা সম্পন্ন মসজিদ মসজিদে হারাম'-এ অবস্থান করবে ঐ সময় হঠাৎ সেখানে তারা দাব্বাতুল আর দেখতে পাবে। রু ও মাকাম (মাকামে ইবরাহীম আঃ)-এর মাঝে নিজের মস্তক হতে মাটি ঝাড়তে থাকবে। লোকেরা ওকে দেখে এদিক ওদিক হয়ে যাবে। এটা মুমিনদের দলের নিকট যাবে এবং তাদের মুখমণ্ডলকে উজ্জ্বল তারকার ন্যায় জ্যোতির্ময় করে তুলবে। না তার থেকে পলায়ন করে কেউ বাঁচতে পারে, না তার থেকে লুকিয়ে গিয়ে রক্ষা পেতে পারে। এমনকি একটি লোক নামায শুরু করে তার নিকট আশ্রয় চাবে। সে তখন তার পিছনে এসে বলবেঃ “এখন তুমি নামাযে দাড়িয়েছো?” অতঃপর তার কপালে চিহ্ন এঁকে দিয়ে সে চলে যাবে। তার এই চিহ্নের পরে মুমিন ও কাফিরের মধ্যে পরিষ্কারভাবে পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে। এমনকি মুমিন কাফিরকে বলবেঃ “হে কাফির! আমাকে আমার প্রাপ্য প্রদান কর।” আর কাফির মুমিনকে বলবেঃ “হে মুমিন! আমাকে আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও।” (এ হাদীসটি আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা হুযাইফা ইবনে উসায়েদ (রাঃ) হতেও মাওকুফ রূপে বর্ণিত আছে)একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, এটা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর যুগে হবে। তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতে থাকবেন। কিন্তু এর ইসনাদ সঠিক নয়। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, সর্বপ্রথম যে নিদর্শন প্রকাশ পাবে তা হলো সূর্যের পশ্চিম দিক হতে উদিত হওয়া এবং দাব্বাতুল আরযের চাশতের সময় এসে পড়া। এ দুটোর মধ্যে যেটা প্রথমে হবে, তার পরপরই দ্বিতীয়টি হবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন: “ছ’টি জিনিসের আগমনের পূর্বেই তোমরা সৎ কাজ করে নাও। ওগুলো হলো- সূর্যের পশ্চিম দিক হতে উদিত হওয়া, ধূম্র নির্গত হওয়া, দাজ্জালের আগমন ঘটা, দাব্বাতুল আর আসা এবং তোমাদের প্রত্যেকের বিশেষ ও সাধারণ বিষয়।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)এ হাদীসটি অন্য সনদে অন্যান্য কিতাবগুলোতেও বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দাব্বাতুল আর বের হবে এবং তার সাথে থাকবে হযরত মূসা (আঃ)-এর লাঠি ও হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর আংটি। লাঠি দ্বারা কাফিরের নাকের উপর মোহর লাগানো হবে এবং আংটি দ্বারা মুমিনের চেহারা উজ্জ্বল করা হবে। এমনকি জনগণ দস্তরখানার উপর একত্রিত হয়ে মুমিন ও কাফিরকে পৃথকভাবে চেনে নেবে।” (এ হাদীসটি আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) স্বীয় কিতাবে বর্ণনা করেছেন)মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, কাফিরদের নাকের উপর আংটি দ্বারা মোহর করে দেয়া হবে এবং মুমিনদের চেহারা লাঠির ঔজ্জ্বল্যে উজ্জ্বল হয়ে যাবে।হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে মক্কার পার্শ্ববর্তী একটি জঙ্গলে প্রবেশ করেন। আমি দেখি যে, একটি শুষ্ক ভূমি রয়েছে, যার চতুর্দিকে রয়েছে বালুকারাশি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এখান থেকে দাব্বাতুল আর বের হবে।” এই ঘটনার কয়েক বছর পর আমি হজ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। তখন আমাকে তার লাঠি দেখানো হয় যা আমার এই লাঠির মত। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ্ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তার চারটি পা হবে। সে সাফার গিরিপথ হতে বের হবে। সে এতো দ্রুত গতিতে চলবে যে, যেন ওটা কোন দ্রুতগামী ঘোড়া। কিন্তু তবুও তিন দিনে তার দেহের এক তৃতীয়াংশও বের হবে।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “জিয়াদে এক কংকরময় ভূমি আছে। সেখান থেকে এই দাব্বাতুল আর বের হবে। আমি যদি সেখানে থাকতাম তবে তোমাদেরকে ঐ কংকরময় ভূমি দেখিয়ে দিতাম। এটা সোজা পূর্ব দিকে যাবে এবং এতো জোরে চলবে যে, চতুর্দিকে ওর শব্দ পৌছে যাবে। সেখানে চীৎকার করে আবার ইয়ামনের দিকে যাবে। এখানেও শব্দ করে সন্ধ্যার সময় মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করে সকালে আসফান পৌছে যাবে।” জনগণ জিজ্ঞেস করলোঃ “এরপর কি হবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এরপর কি হবে তা আমার জানা নেই।”হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, দাব্বাতুল আর মুযদালাফার রাত্রে (১০ই যিলহজ্ব দিবাগত রাত্রে) বের হবে।হযরত উযায়ের (আঃ)-এর কালাম হতে বর্ণিত আছে যে, দাব্বাতুল আর সুদূমের নীচে হতে বের হবে। তার কথা সবাই শুনবে, গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে সময়ের পূর্বেই, সুস্বাদু পানি বিস্বাদ হয়ে যাবে, বন্ধু শত্রুতে পরিণত হবে, হিকমত জ্বলে যাবে, ইলম উঠে যাবে, নীচের যমীন কথা বলবে, মানুষ এমন আশা পোষণ করবে যা কখনো পুরো হবে না, তারা এমন জিনিসের জন্যে চেষ্টা করবে যা কখননা লাভ করতে পারবে না এবং তারা এমন কিছুর জন্যে কাজ করবে যা খাবে না। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “দাব্বাতুল আরযের দেহের উপর সর্বপ্রকারের রঙ থাকবে এবং তার দুই শিং এর মাঝে সওয়ার বা আরোহীর জন্যে এক ফারসীকের পথ হবে।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওটা মোটা বর্শার মত হবে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, ওর লোম থাকবে; ক্ষুর থাকবে, দাড়ী থাকবে এবং লেজ থাকবে না। সে দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে চলবে তবুও তিন দিনে তার দেহের মাত্র এক তৃতীয়াংশ বের হবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, তার মাথা হবে বলদের মাথার মত, চোখ হবে শূকরের চোখের মত, কান হবে হাতীর কানের মত এবং শিং-এর জায়গাটি উটের মত হবে। তার ঘাড় হবে উটপাখীর মত, বক্ষ হবে সিংহের মত, রঙ হবে চিতা বাঘের মত, ক্ষুর হবে বিড়ালের মত, লেজ হবে ভেড়ার মত এবং পা হবে উটের মত। প্রত্যেক দুই জোড়ের মাঝে বার গজের ব্যবধান থাকবে। তার সাথে হযরত মূসা (আঃ)-এর লাঠি ও হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর আংটি থাকবে। সে হযরত মূসা (আঃ)-এর ঐ লাঠি দ্বারা প্রত্যেক মুমিনের কপালে চিহ্ন দিয়ে দেবে, যা ছড়িয়ে পড়বে এবং তার চেহারা জ্যোতির্ময় হয়ে যাবে। আর প্রত্যেক কাফিরের চেহারার উপর হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর আংটি দ্বারা চিহ্ন দিয়ে দেবে যা ছড়িয়ে পড়বে এবং তার সারা চেহারা কালো হয়ে যাবে। এইভাবে মুমিন ও কাফিরকে পৃথক করা যাবে। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় এবং খাদ্য খাওয়ার সময় মানুষ একে অপরকে “হে মুমিন!' এবং ‘হে কাফির!' এই বলে সম্বোধন করবে। দাব্বাতুল আর এক এক করে নাম ডেকে ডেকে তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ অথবা জাহান্নামের দুঃসংবাদ শুনিয়ে দেবে। এই আয়াতের ভাবার্থ এটাই।