undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

আপনি কি দেখেন না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যারা আছে আসমানসমূহে ও যারা আছে যমীনে , আর সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু [১] এবং সিজদা করে মানুষের মধ্যে অনেকে [২]? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি [৩]। আল্লাহ্ যাকে হেয় করেন [৪] তার সম্মানদাতা কেউই নেই; নিশ্চয় আল্লাহ্ যা ইচ্ছে তা করেন।

[১] সমগ্র সৃষ্টজগত স্রষ্টার আজ্ঞাধীন ও ইচ্ছাধীন। কারো কারো মতে এখানে সিজদা করার দ্বারা আনুগত্য করা বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] সৃষ্টজগতের এই আজ্ঞানুবর্তিতা দুই প্রকার- (এক) সৃষ্টিগত ব্যবস্থাপনার অধীনে বাধ্যতামূলক আনুগত্য। মুমিন, কাফের, জীবিত, মৃত, জড়পদার্থ ইত্যাদি কেউ এই আনুগত্যের আওতা বহির্ভূত নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই সমভাবে আল্লাহ তা'আলার আজ্ঞাধীন ও ইচ্ছাধীন। বিশ্ব-চরাচরের কোন কণা অথবা পাহাড় আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে এতটুকুও নড়াচড়া করতে পারে না। (দুই) সৃষ্টজগতের ইচ্ছাধীন আনুগত্য। অর্থাৎ স্ব-ইচ্ছায় আল্লাহ তা’আলার বিধানাবলী মেনে চলা। আয়াতে এ প্রকার আনুগত্যই বোঝানো হয়েছে। আসমান যমীনে যত কিছু আছে যেমন ফেরেশতা, যাবতীয় জীব-জন্তু সবাই আল্লাহকে সিজদা করে বা তাঁর আনুগত্য করে। অনুরূপভাবে সূর্য, চন্দ্র ও তারকাসমূহও আল্লাহর আনুগত্য ও সিজদা করে। সূর্য, চন্দ্র ও তারকাসমূহকে আলাদাভাবে বর্ণনা করার কারণ হচ্ছে, আল্লাহ ব্যতীত এ গুলোর ইবাদাত করা হয়েছিল, তাই জানিয়ে দেয়া হলো যে, তোমরা এদের পূজা কর, অথচ এরা আল্লাহর জন্য সিজদা করে। অন্য আয়াতে সেটা স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, “তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চাঁদকেও নয় ; আর সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন , যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর।” [সূরা ফুসসিলাত: ৩৭] [ইবন কাসীর] যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইচ্ছাধীন আনুগত্য তো শুধু বিবেকবান মানুষ, জিন ইত্যাদির মধ্যে হতে পারে। জীবজন্তু, উদ্ভিদ ও জড়পদার্থের মধ্যে তো বিবেক ও চেতনাই নেই। এমতাবস্থায় এগুলোর মধ্যে ইচ্ছাধীন আনুগত্য কিভাবে হবে? এর উত্তর এই যে, কুরআনুল কারীমের বহু আয়াত ও বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, বিবেক, চেতনা ও ইচ্ছা থেকে কোন সৃষ্টবস্তুই মুক্ত নয়। সবার মধ্যেই কম-বেশী এগুলো বিদ্যমান আছে। জন্তু-জানোয়ারের বিবেক ও চেতনা সাধারণতঃ অনুভব করা হয়। উদ্ভিদের বিবেক ও চেতনাও সামান্য চিন্তা ও গবেষণা দ্বারা চেনা যায়, কিন্তু জড় পদার্থের বিবেক ও চেতনা এতই অল্প ও লুক্কায়িত যে, সাধারণ মানুষ তা বুঝতেই পারে না। কিন্তু তাদের স্রষ্টা ও মালিক বলেছেন যে, তারাও বিবেক ও চেতনার অধিকারী। যেমন আল্লাহ বলেন, “এমন কিছু নেই। যা তাঁর সপ্ৰশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না” [সূরা আল-ইসরা: ৪৪] তাছাড়া সূর্য আরশের নিচে সিজদা করার কথা হাদীসে এসেছে। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বেশী জানেন। তিনি বললেন, এটা যায় তারপর আরাশের নিচে সিজদা করে। অতঃপর অনুমতি গ্ৰহণ করে। অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন তাকে বলা হবে, যেখান থেকে এসেছি সেখানেই ফিরে যাও। [বুখারী: ৩১৯৯] আবুল আলীয়া বলেন, আকাশের যত তারকা আছে, সূর্য ও চাঁদ সবই যখন ডুবে তখন আল্লাহর জন্য সিজদা করে, যতক্ষণ সেগুলোকে অনুমতি না দেয়া হয়, ততক্ষণ সেগুলো ফিরে আসে না। তারপর তাদের উদিত হওয়ার স্থানে উদিত হয়। আর পাহাড় ও গাছের সিজদা হচ্ছে ডানে ও বামে তাদের ছায়া পড়া। [ইবন কাসীর] কাজেই আলোচ্য আয়াতে সে আনুগত্যকে সিজদা শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে, তা ইচ্ছাধীন আনুগত্য। আয়াতের অর্থ এই যে, মানব জাতি ছাড়াও (জিনসহ) সব সৃষ্টবস্তু স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে সিজদা করে অর্থাৎ আজ্ঞা পালন করে।

তবে মানব ও জিন জাতিকে আল্লাহ্ তা'আলা বিবেক ও চেতনার একটি পূর্ণস্তর দান করেছেন। এ কারণেই তাদেরকে আদেশ ও নিষেধের অধীন করা হয়েছে। মানব জাতিই সর্বাধিক বিবেক ও চেতনা লাভ করেছে। এ জন্য তারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে- (এক) মুমিন, অনুগত ও সিজদাকারী এবং (দুই) কাফের, অবাধ্য ও সিজদার প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী। সিজদার তাওফীক না দিয়ে আল্লাহ তা'আলা শেষোক্ত দলকে হেয় করেছেন। [সা'দী] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন আদম৷ সন্তান সিজদার আয়াত পড়ে (এবং সিজদা করে), শয়তান তখন দূরে গিয়ে কাঁদতে থাকে। সে বলতে থাকে, আদম সন্তানকে সিজদা করতে বলা হয়েছে সে সিজদা করেছে, তার জন্য নির্ধারিত হল জান্নাত। আর আমাকে সিজদা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আর আমি তা করতে অস্বীকার করেছি, ফলে আমার জন্য নির্ধারিত হলো জাহান্নাম ' [মুসলিম: ৮১] এ আয়াতটি সিজদার আয়াত। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘সুরা আল-হজ্জে দু'টি সাজদাহ রয়েছে। ' [মুস্তাদরাকে হাকিম: ৩৪৭২]

[২] অর্থাৎ এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা নিছক বাধ্য হয়েই নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবে, সানন্দে ও আনুগত্যশীলতা সহকারেও তাঁকে সিজদা করে। [ইবন কাসীর] পরবর্তী বাক্যে তাদের মোকাবিলায় মানব সম্পপ্রদায়ের অন্য যে দলের কথা বলা হচ্ছে তারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর সামনে মাথা নত হতে অস্বীকার করে এবং অহংকার করে। [ইবন কাসীর] কিন্তু অন্যান্য স্বাধীন ক্ষমতাহীন সৃষ্টির মতো তারাও প্রাকৃতিক আইনের বাঁধন মুক্ত নয়। কিন্তু তারাও ইচ্ছে করলেই যা ইচ্ছে তা করে বেড়াতে পারে না। তাদেরকেও জন্ম, মৃত্যু, জ্বরা, রোগ-শোক ইত্যাদিতে আল্লাহর নিয়মনীতির বাইরে চলার সুযোগ দেয়া হয়নি। সে হিসেবে আনুগত্যের ব্যাপকতা ও বাধ্যতামূলক সিজদার মধ্যে তারাও শামিল রয়েছে। নিজেদের ক্ষমতার পরিসরে বিদ্রোহের নীতি অবলম্বনের কারণে তারা আযাবের অধিকারী হয়।

[৩] তাদের অনেকের উপর আযাব অবধারিত হওয়ার কারণ হচ্ছে, তারা আনুগত্য করেনি। তারা সিজদা করেনি। [কুরতুবী]

[৪] অর্থাৎ তাকে আল্লাহ কাফের ও দূর্ভাগা বানিয়ে অপমানিত করেছেন। সুতরাং তাকে সম্মান দেয়ার আর কেউ নেই যে সে তার দ্বারা সৌভাগ্যশালী ও সম্মানিত হতে পারে। আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করতে পারেন। দূৰ্ভাগা হওয়া, সৌভাগ্যশালী হওয়া, সম্মানিত বা অপমানিত হওয়া এ সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। [ফাতহুল কাদীর] যে ব্যক্তি চোখ মেলে প্রকাশ্য ও উজ্জ্বল সত্য দেখে না এবং যে তাকে বুঝায় তার কথাও শোনে না সে নিজেই নিজের জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননার ডাক দেয়। সে নিজে যা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার ভাগ্যে তাই লিখে দেন। তারপর আল্লাহই যখন তাকে সত্য অনুসরণ করার মর্যাদা দান করেননি তখন তাকে এ মর্যাদায় অভিষিক্ত করার ক্ষমতা আর কার আছে?

Maximize your Quran.com experience!
Start your tour now:

0%