You are reading a tafsir for the group of verses 21:105 to 21:107
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

১০৫-১০৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি তাঁর সবান্দাদেরকের যেমন আখেরাতে ভাগ্যবান করে থাকেন তেমনই দুনিয়াতেও তাদেরকে রাজ্য ও ধনমাল দান করেন। এটা আল্লাহর নিশ্চিত ওয়াদা এবং সত্য ফায়সালা। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয় যমীন আল্লাহর অধিকারভুক্ত। তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান ওর ওয়ারিস বানিয়ে দেন, আর উত্তম পরিণাম তো খোদাভীরুদের জন্যেই।” (৭:১২৮) অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে ও মু'মিনদেরকে পার্থিব জীবনেও সাহায্য করবো এবং যেই দিন সাক্ষীরা দণ্ডায়মান হবে সেই দিনও (অর্থাৎ আখেরাতেও) সাহায্য করবো।” (৪০:৫১) অন্যত্র বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করেছে তাদের সঙ্গে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে বিজয়ী ও শক্তিমান করবেন যেমন বিজয়ী ও শক্তিমান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে আর তিনি তাদের জন্যে তাদের দ্বীনকে সদঢ় করবেন যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেন ও যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।” (২৪:৫৫)আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, এটা শারইয়্যাহ ও কাদরিয়্যাহ কিতাব সমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং এটা অবশ্য অবশ্যই হবে। তাই, তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছি।'হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, 'যাকূর' দ্বারা তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ‘যাবুর দ্বারা বুঝানো হয়েছে কিতাবকে। কেউ কেউ বলেন যে, যাবুর হলো ঐ কিতাবের নাম যা হযরত দাউদের (আঃ) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। এখানে ‘যি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাওরাত। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, “যি দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে। হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, যি হলো ওটাই যা আকাশে রয়েছে। অর্থাৎ যা আল্লাহর নিকট বিদ্যমান উম্মুল কিতাব, যা সর্বপ্রথম কিতাব। অর্থাৎ লাওহে মাহ। এটাও বর্ণিত আছে যে, যাবুর' হলো ঐ আসমানী কিতাবসমূহ যে গুলি নবীদের (আঃ) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। আর যি হলো প্রথম কিতাব অর্থাৎ লাওহে মাহফুয।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা তাওরাত ও যাবুরে এবং আসমান ও যমীন সৃষ্ট হওয়ার পূর্বে তার সাবেক জ্ঞানে খবর দিয়েছেন যে, হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) উম্মত যমীনের বাদশাহ হয়ে যাবে এবং সৎকর্মশীল হয়ে বেহেশতে প্রবেশ করবে। একথাও বলা হয়েছে যে, যমীন দ্বারা এখানে জান্নাতের যমীন বুঝানো হয়েছে। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেনঃ “সৎকর্মশীল লোক আমরাই।” সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা মুমিন লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ শেষ নবী হযরত মুহাম্মদের (সঃ) উপর অবতারিত পূর্ণ উপদেশ বাণী রয়েছে ঐ সম্প্রদায়ের জন্যে যারা ইবাদত করে। যারা আমাকে মেনে চলে এবং আমার নামে নিজেদের প্রবৃত্তিকে দমন করে।অতঃপর আল্লাহ পাক বলেনঃ হে নবী (সঃ)! আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রহমত বা করুণী রূপেই প্রেরণ করেছি। সুতরাং যারা এই রহমতের কারণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তারা হবে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। পক্ষান্তরে, যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা উভয় জগতে হবে ধ্বংস প্রাপ্ত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী (সঃ)! তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য কর না যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং তারা তাদের সম্প্রদায়কে নামিয়ে আনে ধ্বংসের ক্ষেত্র জাহান্নামে যার মধ্যে তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট এই আবাস স্থল!” (১৪:২৮-২৯) কুরআন কারীমের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ মু'মিনদের জন্যে এটা (কুরআন) পথ-নির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে। বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তারা এমন যে, যেন তাদেরকে আহ্বান করা হয় বহু দূর হতে!" (৪১:৪৪)।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলা হয়ঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি মুশরিকদের উপর বদ দুআ করুন!” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমি লানতকারীরূপে প্রেরিত হই নাই, বরং রহমত রূপে প্রেরিত হয়েছি।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছে) অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি তো শুধু রহমত ও হিদায়াত।" অন্য রিওয়াইয়াতে এর সাথে এটাও রয়েছেঃ “আমাকে এক কওমের উত্থান ও অন্য কওমের পতনের সাথে প্রেরণ করা হয়েছে।” বর্ণিত আছে যে, আবৃ জাল একদা বলেঃ “হে কুরায়েশের দল! মুহাম্মদ (সঃ) ইয়াসরিবে (মদীনায়) চলে গেছে এবং পরিভ্রমণকারী প্রহরী সে এদিকে ওদিকে তোমাদের অনুসন্ধানে পাঠিয়ে দিয়েছে। দেখো, তোমরা সদা সতর্ক থাকো। সে ক্ষুধার্ত সিংহের ন্যায় ওৎ পেতে রয়েছে। কেননা, তোমরা তাকে দেশ হতে বিতাড়িত করেছে। আল্লাহর শপথ! তার যাদু অতুলনীয়। আমি যখনই তাকে বা তার যে কোন সঙ্গীকে দেখি তখনই তার সাথে শয়তানি আমার দৃষ্টি গোচর হয়। তোমরা তো জান যে, (মদীনার) আউস ও খাযরাজ গোত্র আমাদের শত্রু। আমাদের এই শত্রুকে ঐ শত্রুরা আশ্রয় দিয়েছে। তার এই কথার জবাবে মুতইম ইবনু আ’দী তাকে বলেনঃ “হে আবুল হাকাম! আল্লাহর কসম! তোমাদের যে ভাইটিকে তোমরা দেশ থেকে বিতাড়িত করেছো তাঁর চেয়ে তো অধিক সত্যবাদী ও প্রতিশ্রুতি পালনকারী আর কাউকেও আমি দেখি নাই! যখন তোমরা এই ভাল লোকটির সাথে দুর্ব্যবহার করেছে তখন তাকে ছেড়ে দাও। তোমাদের এখন উচিত তার থেকে সম্পূর্ণ পৃথক থাকা।” তখন আবু সুফিয়ান ইবনু হারিস বললোঃ “না, না। বরং তার উপর কঠোরতা অবলম্বন করা উচিত। জেনে রেখো যে, যদি তার পক্ষের লোকেরা তোমাদের উপর জয়যুক্ত হয় তবে তোমাদের কোথাও ঠাঁই মিলবে না। তোমাদের আত্মীয় স্বজনই তোমাদেরকে আশ্রয় দেবে না। সুতরাং তোমাদের উচিত মদীনাবাসীদের উপর এই চাপ সৃষ্টি করা যে, তারা যেন মুহাম্মদকে (সঃ) পরিত্যাগ করে, যাতে সে একাকী হয়ে যায়। যদি তারা এটা অস্বীকার করে তবে তাদের উপর আক্রমণ চালাতে হবে। যদি তোমরা এতে সম্মত হও তবে আমি মদীনার প্রান্তে প্রান্তে সৈন্য মোতায়েন করে দেবো এবং তাদেরকে সমুচিত শিক্ষা প্রদান করবো।" যখন রাসূলুল্লাহর (সঃ) কানে এ সংবাদ পৌঁছলো তখন তিনি বললেনঃ “যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! আমি তাদেরকে হত্যা ও ধ্বংস করবো এবং কতকগুলিকে বন্দী করার পর অনুগ্রহ করে ছেড়ে দেবো। আমি হলাম রহমত স্বরূপ। আমাকে দুনিয়া হতে উঠিয়ে নিবেন না, যে পর্যন্ত না তিনি তার দ্বীনকে সারা দুনিয়ার উপর বিজয়ী না করবেন। আমার পাঁচটি নাম রয়েছে। সেগুলি হলোঃ মুহাম্মদ (সঃ), আহমাদ (সঃ), মাহী, কেননা আমার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কুফরীকে নিশ্চিহ্ন করবেন। আমার চতুর্থ নাম হাশির। কেননা, আমার পায়ের উপর লোকদেরকে একত্রিত করা হবে। আর আমার পঞ্চম নাম হলো আকিব।" (এ হাদীসটি আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আহমাদ ইবনু সালিহ বলেন: “আমি আশা করি হাদীসটি বিশুদ্ধ)বর্ণিত আছে যে, হযরত হুযাইফা (রাঃ) মাদায়েনে অবস্থান করছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি এমন কিছু আলোচনা করতেন যা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন। একদা হযরত হুযাইফা (রাঃ) সালমান ফারসীর (রাঃ) নিকট আগমন করেন। তখন হযরত সালমান (রাঃ) বলেনঃ হে হুযাইফা (রাঃ)! একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ভাষণে বলেছিলেনঃ “ক্রোধের সময় যদি আমি কাউকেও ভাল মন্দ কিছু বলে দিই বা লানত করি তবে জেনে রেখো যে, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমাদের মত আমারও রাগ হয়। হাঁ, তবে যেহেতু আমি সারা বিশ্বের জন্যে রহমত স্বরূপ, সেহেতু আমার প্রার্থনা এই যে, আল্লাহ যেন আমার এই শব্দগুলিকেও মানুষের জন্যে করুণার কারণ বানিয়ে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এখন বাকী থাকলো এই কথা যে, কাফিরদের জন্যে কি করে তিনি রহমত হতে পারেন? এই উত্তরে বলা যেতে পারেঃ হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে এই আয়াতেরই তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, মু'মিনদের জন্যে তো তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে রহমত স্বরূপ ছিলেন। কিন্তু যারা মুমিন নয় তাদের জন্যে তিনি দুনিয়াতেই রহমত স্বরূপ ছিলেন। তারা তাঁরই র হমতের বদৌলতে যমীনে ধ্বসে যাওয়া হতে, আকাশ হতে পাথর বর্ষণ হতে রক্ষা পেয়ে যায়। পূর্ববর্তী অবাধ্য উম্মতদের উপর এই শাস্তি এসেছিল। (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

Maximize your Quran.com experience!
Start your tour now:

0%