৭৪-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর: এটা প্রকাশ্যভাবে জানা যাচ্ছে যে, যাদুকররা ঈমান আনয়নের পর ফিরাউনকে যে সব উপদেশ দিয়েছিল, এই আয়াতগুলি ওরই অন্তর্ভুক্ত। তারা তাকে আল্লাহর শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করছে এবং তার নিয়ামত রাজির লোভ দেখাচ্ছে। তারা তাকে বলছে যে, জাহান্নামীদের বাসস্থান জাহান্নাম, যেখানে মৃত্যু তো কখনো হবেই না, কিন্তু জীবনও হবে খুবই কষ্টপূর্ণ, মৃত্যু অপেক্ষাও কঠিনতর। যেমন আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “না মৃত্যু আসবে, না শাস্তি হালকা করা হবে, কাফিরদেরকে আমি এরূপ ভাবেই শাস্তি দিতে থাকি।” (৩৫:৩৬) অন্য জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “ওটা উপেক্ষা করবে যে নিতান্ত হতভাগ্য। যে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সেখানে সে মরবেও না বাঁচবেও না।” (৮৭:১১-১৩) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “জাহান্নামবাসী বলবেঃ হে জাহান্নামের রক্ষক! তুমি প্রার্থনা কর যেন আল্লাহ তাআলা তাড়াতাড়ি আমাদের মৃত্যুদান করেন।” তখন তিনি উত্তরে বলবেনঃ “ না তোমরা আর মৃত্যুবরণ করবে, না এর থেকে বের হতে পারবে।”হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রকৃত জাহান্নামী তো জাহান্নামে পড়েই থাকবে। সেখান তাদের মৃত্যু হবে, না তারা সুখের জীবন লাভ করবে। তবে এমন লোকও হবে যাদেরকে তাদের পাপের প্রতিফল হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে যেখানে তারা পুড়ে কয়লার মত হয়ে যাবে। অতঃপর শাফাআ’তে অনুমতির পরে তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে। তারপর তাদেরকে বেহেশতের ধারে বিক্ষপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়া হবে। জান্নাতীদেরকে বলা হবেঃ “তাদের উপর পানি ঢেলে দাও।” তোমরা যেমন নদীর ধারে জমিতে বীজ অংকুরিত হতে দেখে থাকো। তেমনিভাবে তারা অংকুরিত হয়ে যাবে।” একথা শুনে একটি লোক বলে উঠলোঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) এমন উদাহরণ দিলেন যে, যেন তিনি কিছু দিন জঙ্গলে বসবাস করেছেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) অন্য হাদীসে আছে যে, খুৎবায়। এই আয়াতটি পাঠ করার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) একথা বলেছিলেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে মু'মিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তারা উঁচু প্রাসাদ বিশিষ্ট জান্নাত লাভ করবে। হযরত উবায়দা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে একশ' টি প্রকোষ্ঠ রয়েছে প্রতিটি প্রকোষ্ঠের মাঝে ৩৩টা ব্যবধান রয়েছে যতটা ব্যবধান রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। সবচেয়ে উপরে রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখান থেকে চারটি নহর প্রবাহিত হয়ে থাকে। ওর ছাদ হচ্ছে রহমানের (দয়াময় আল্লাহর) আরশ। তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করলে জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্যে প্রার্থনা করো। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)ইয়াযীদ ইবনু আবি মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ “বলা হতো যে, বেহেশতে একশটি শ্রেণী রয়েছে। প্রতি দু' শ্রেণীর মাঝে এতোটা দুরত্ব রয়েছে যতটা দুরত্ব রয়েছে আসমান ও যমীনের মাঝে। তাতে ইয়াকূত, মণিমুক্তা এবং অলংকারও রয়েছে। প্রত্যেক বেহেশতে আমীর বা নেতা রয়েছে যার নেতৃত্ব অন্যেরা স্বীকার করে থাকে। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃইল্লিয়্যিনে অবস্থানকারীদের এমনই দেখা যায় যেমন তোমরা আকাশের তারকাগুলি দেখে থাকো। জনগণ বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এই উঁচু শ্রেণীগুলি তো নবীদের (আঃ) জন্যেই বিশিষ্ট হবে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তারা হবে ঐ সব লোক যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নবীদেরকে (আঃ) সত্যবাদীরূপে স্বীকার করে নেয়।" সুনানের হাদীসে এও রয়েছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ) তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ওটা হলো স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র। যারা অপবিত্রতা, পাপকার্য এবং শিরক ও কুফরী হতে দূরে থাকে। যারা এক আল্লাহরই ইবাদত করে এবং রাসূলদের (আঃ) আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়। তাদেরই জন্যে রয়েছে এই লোভনীয় ও হিংসার যোগ্য বাসস্থান।