১০৯-১১২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিয়ামতের দিন কারো ক্ষমতা হবে না যে, সে অন্যের জন্যে সুপারিশ করে। তবে যাকে তিনি অনুমতি দিবেন সে করতে পারে। আকাশের ফেরেশতা অথবা কোন বুযুর্গ ব্যক্তিও আল্লাহ তাআলার অনুমতি ছাড়া কারো জন্যে সুপারিশ করতে পারবে না। সবাই সেদিন তীত সন্ত্রস্ত থাকবে। অনুমতি ছাড়া কারো সুপারিশ চলবে না। ফেরেশতামণ্ডলী ও রুহ (জিবরাঈল (আঃ) সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন। আল্লাহ তাআলার অনুমতি ছাড়া কেউ যুবান খুলতে পারবে না স্বয়ং সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মহাম্মদ (সঃ) আরশের নীচে আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন। খুব বেশী তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করবেন। দীর্ঘক্ষণ তিনি সিজদায় পড়ে থাকবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! মাথা উঠাও, কথা বল, তোমার কথা শোনা হবে। শাফাআত কর, তোমার শাফাআত কবুল করা হবে। তারপর সীমা নির্ধারণ করা হবে। তিনি সুপারিশ করে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আবার তিনি ফিরে আসবেন এবং এটাই হবে। চার বার এরূপই ঘটবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং সমস্ত নবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।হাদীসে আরো আছে যে, আল্লাহ তাআলা হুকুম করবেনঃ “ঐ লোকদেরকেও জাহান্নাম হতে বের করে আনো যাদের অন্তরে এক দানা পরিমাণও ঈমান আছে।” তখন তার (ফেরেশতারা) বহু সংখ্যক লোককেজাহান্নাম হতে বের করে আনবেন। আবার তিনি বলবেনঃ “যাদের অন্তরে অর্ধদানা পরিমাণও ঈমান আছে তাদেরকেও বের করে আনো। যাদের অন্তরে অনুপরিমাণও ঈমান আছে তাদেরকেও বের করে নিয়ে এসো। যাদের অন্তরে এর চেয়েও কম ঈমান রয়েছে তাদেরকেও জাহান্নাম হতে বের করে নিয়ে এসো। এর চেয়েও কম ঈমানদারদের বের করো।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনি সমস্ত সৃষ্টজীবকে নিজের জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন, কিন্তু সৃষ্টজীব তাদের জ্ঞান দ্বারা তাকে পরিবেষ্টন করতে পারে না। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না।" (২:২৫৫)তিনি বলেনঃ তার নিকট সবাই হবে অধোবদন এবং সেই ব্যর্থ হবে যে জুলুমের ভার বহন করবে। কেননা, তিনি মৃত্যু ও ধ্বংস হতে পবিত্র ও মুক্ত। তিনি চিরঞ্জীব ও চির বিদ্যমান। তিনি ঘুমও যান না এবং তাঁকে তন্দ্রাও আচ্ছন্ন করে না। তিনি নিজে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছেন এবং কৌশল ও ক্ষমতা বলে সবকিছুকেই প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন। সবকিছুর দেখা শোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ তিনিই করে থাকেন। সবারই উপর তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং সমস্ত সৃষ্টজীব তাঁরই মুখাপেক্ষী। মহান আল্লাহর মর্জি বা ইচ্ছা ছাড়া কেউ সৃষ্টও হতে পারে না এবং বাকীও থাকতে পারে না। এখানে যে জুলুম করবে সেখানে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা, সেইদিন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হকদারকে তার হক আদায় করে দিবেন। এমন কি শিং বিহীন বকরীকেও তিনি শিং বিশিষ্ট বকরী হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করাবেন।হাদীসে রয়েছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “আমার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ! আজ জালিমের জুলুম আমাকে অতিক্রম করতে পারবে না।” সহীহ্ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা জুলুম থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকাররূপে প্রকাশ পাবে। আর সেইদিন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঐ ব্যক্তি যে মুশরিক অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। কেননা, শিক হচ্ছে বড় জুলুম।"। জালিমদের পরিণাম ফল বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের প্রতিদানের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, যারা মু'মিন অবস্থায় সকার্যাবলী সম্পাদন করে তাদের অবিচারেরও কোন আশংকা নেই এবং ক্ষতিরও কোন ভয় নেই।