undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

৫ নং আয়াতের তাফসীর:

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা (نَعْبُدُ) ক্রিয়ার পূর্বে (إِيَّاكَ) কর্মপদকে নিয়ে এসেছেন সীমাবদ্ধতা বুঝানোর জন্য। অর্থাৎ আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, অন্য কারো নয় এবং আপনার কাছেই সাহায্য চাই, অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর কাছে চাই না।

এটাই হল তাওহীদে উলুহিয়্যাহ

(توحيد الألوهية),

ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার এককত্ব যা মুসলিমদের ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য করে।

অধিকাংশ মুসলিমদের বিশ্বাস, আমরা আল্লাহ তা‘আলার ওপর বিশ্বাসী, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর বিশ্বাসী; তাই আমরা মুসলিম। আর যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বিশ্বাস করে না তারা কাফির। এ ধারণা ভুল, কারণ মক্কার তৎকালীন মুশরিকগণ বিশ্বাস করত আল্লাহ তা‘আলা আছেন, আল্লাহ তা‘আলা একজন, তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুর মালিক এবং তাদের ভাল-মন্দের মালিক ইত্যাদি। মূলত এটা হল তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ

(توحيد الربوبية)

তারা স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহ তা‘আলার এককত্বের ওপর বিশ্বাসী ছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللّٰهُ)

“আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? তবে তারা অবশ্যই বলবে ‘আল্লাহ’।”(সূরা যুমার ৩৯:৩৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللّٰهُ)

“যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘কে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং চাঁদ ও সূর্যকে নিয়ন্ত্রণ করছেন?’তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। (সূরা আনকাবুত ২৯:৬১)

অনুরূপভাবে সূরা লুকমানের ২৫ নং আয়াতে ও সূরা যুখরুফের ৯ নং আয়াতে মুশরিকদের তাওহীদে রুবুবিয়্যাহর স্বীকৃতির কথা উল্লেখ রয়েছে।

কিন্তু যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হতো তাহলে তারা মূর্তির কাছে ধরনা দিত, তাদের কাছে সাহায্য চাইত অর্থাৎ সরাসরি তাওহীদে উলুহিয়্যাহ বিশ্বাস করত না। তাই একজন ব্যক্তি যতক্ষণ না তাওহীদে উলুহিয়্যাহর (ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার এককত্বের) ওপর বিশ্বাস করতঃ আমল করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মু’মিন হতে পারবে না। ইবাদতে আল্লাহ তা‘আলার এককত্ব মেনে নেয়া মাত্র ব্যক্তির চাওয়া পাওয়াসহ সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছেই হবে। আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান সবকিছু আল্লাহ তা‘আলারই মেনে চলবে এবং দু‘আ-প্রার্থনা, সিজদা, কুরবানী সবকিছু শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই করবে। এ তাওহীদ না থাকলে সে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য ব্যক্তি বা বস্তুর পূজা-উপাসনা করতে পারে, যেমন ছিল মক্কার মুশরিকদের অবস্থা। অনেকে ধারণা করে ইবাদত শুধু সালাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাত, কালেমা ইত্যাদি। এরূপ ধারণা সঠিক নয় বরং ইবাদত হলো: প্রত্যেক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ঐ সকল কথা ও কাজ যা আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন বা যা দ্বারা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ)

“বল আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ একমাত্র বিশ্বের প্রতিপালকের জন্য।”(সূরা আন‘আম ৬:১৬২)

ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির কাছে নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ)

“আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, (তারা বলবে) তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর।”(সূরা নাহল ১৬:৩৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَاِلٰی عَادٍ اَخَاھُمْ ھُوْدًاﺚ قَالَ یٰقَوْمِ اعْبُدُوا اللہَ مَا لَکُمْ مِّنْ اِلٰھٍ غَیْرُھ۫)

“আদ জাতির নিকট তাদের ভ্রাতা হূদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই।” (সূরা হূদ ১১:৫০)

এরূপ সামূদ, সালেহ ও নূহসহ সকল নাবীদেরকে তাওহীদ বা আল্লাহ তা‘আলার এককত্ব প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা প্রেরণ করেছেন। আমাদের নাবী, সর্বশেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দাওয়াত ও শিক্ষাও ছিল সেরূপ। তিনি মক্কার মানুষদের যখন বললেন:

قُوْلُوْا لَا إلٰهَ إِلَا اللہَ تُفْلِحُوْا

‘বল, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তোমরা সফল হবে।’(সহীহ ইবনু খুযাইমা হা: ১৫৯) এ দাওয়াত পাওয়ার সাথে সাথে নিকটের মানুষ দূর হয়ে গেল, বন্ধু শত্র“ হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে এ আকীদাহ ও আদর্শের ওপর গড়ে তুলেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছোট বালক আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলেন:

يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظْ اللّٰهَ يَحْفَظْكَ احْفَظْ اللّٰهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلْ اللّٰهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللّٰهِ

হে বৎস! আমি তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেব। তুমি আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে হেফাযত কর আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে হেফাযত করবেন, তুমি আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে হেফাযত কর (তাহলে) সর্বাবস্থায় তাঁকে পাবে। যখন কিছু চাবে তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছেই চাবে, যখন সাহায্য চাবে তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছেই সাহায্য চাবে। (তিরমিযী হা: ২৫১৬, মিশকাত হা: ৫৩০২, সহীহ)

Maximize your Quran.com experience!
Start your tour now:

0%