undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

পিতাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তারা তাঁকে সম্মত করেই নিলো এবং হযরত ইউসুফকে (আঃ) নিয়ে জঙ্গলের দিকে চললো। তারা সবাই একমত হয়ে গেল যে, ইউসুফকে (আঃ) কোন অব্যবহৃত কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করে দিবে। অথচ তারা পিতাকে বলেছিল যে, ইউসুফকে (আঃ) তারা আনন্দিত করবে এবং তারা সম্মানের সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু জঙ্গলে গিয়েই তারা বিশ্বাস ঘাতকতা শুরু করে দিলো এবং সবচেয়ে বড় কথা এই যে, একই সাথে সবাই তারা হৃদয়কে কঠোর করে নিলো। হযরত ইউসুফকে (আঃ) বিদায় করার সময় তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং চুমু খান। তারপর তাঁর জন্যে দুআ’' করেন। পিতার চক্ষুর আড়াল হওয়া মাত্রই ভ্রাতাগণ ইউসুফকে (আঃ) কষ্ট দিতে শুরু করে। তাঁকে গাল মন্দ দেয় এবং মারপিট করে। এরপর ঐ কূপের কাছে এসে তারা রশি দ্বারা তাঁর হাত পা বেঁধে কূপের মধ্যে ফেলে দিতে উদ্যত হয়। তিনি এক এক জনের কাছে গিয়ে অঞ্চল টেনে ধরেন এবং দয়ার আবেদন জানান। কিন্তু প্রত্যেকেই তাঁকে মেরে, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অবশেষে তিনি নিরাশ হয়ে যান। তারপর সবাই মিলে তাঁকে আরো শক্ত করে রশি দ্বারা বেঁধে কূপের মধ্যে লটকিয়ে দেয়। তিনি কূপের পার্শ্বদেশ হাত দ্বারা ধরে নেন। কিন্তু ভ্রাতাগণ তাঁর অঙ্গুলির উপর মেরে কূপের পার্শ্বদেশ থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নেয়। কূপের অর্ধেক পর্যন্ত তিনি পৌঁছেছেন এমতাবস্থায় তারা রশি কেটে দেয় এবং তিনি কূপের তলদেশে পড়ে যান। কূপের মধ্যে একটি পাথর ছিল, তিনি ঐ পাথরের উপর দাঁড়িয়ে যান। ঐ বিপদের সময় ঠিক ঐ কঠিন ও সংকীর্ণ মুহূর্তে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর কাছে ওয়াহী পাঠালেন যে, তিনি যেন মনে প্রশান্তি আনয়ন করেন এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করেন। চিন্তার কোনই কারণ নেই। তিনি যেন এটা মনে না করেন যে, ঐ বিপদ কখনো দূর হবে না। তার জেনে রাখা উচিত যে, কষ্টের পরেই স্বস্তি রয়েছে। তাঁর ভাইদের উপর মহান আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করবেন। তারা তাঁর কাছে নতি স্বীকার করবে। তারা আজ তাঁর সাথে যে কাজ করলে এমন সময় আসবে যে, তাদেরকে তাদের এই কাজ সম্পর্কে অবহিত করে দেয়া হবে। তখন তারা লজ্জায় অবনত মস্তকে দাড়িয়ে নিজেদের অপরাধমূলক কাজের কথা শুনতে থাকবে এবং তারা জানতেও পারবে না যে, তিনিই ইউসুফ (আঃ)। যেমন হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন হযরত ইউসুফের (আঃ) ভ্রাতাগণ তাঁর নিকট আগমন করে তখন তিনি তাদেরকে চিনে নেন, কিন্তু তারা তাকে চিনতে পারে নাই। ঐ সময় তিনি একটি পেয়ালা চেয়ে নেন এবং ওটাকে নিজের হাতের উপর রেখে অঙ্গুলি দ্বারা আঘাত করেন। ফলে ঠন ঠন শব্দ হয়। তখনই তিনি ভাইদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “এই পেয়ালাটি তো কিছু কথা বলছে এবং তোমাদের সম্পর্কেই বলছে। এটা এই কথা বলছে যে, তোমাদের নাকি ইউসুফ (আঃ) নামক একটি বৈমাত্রেয় ভাই ছিল। তোমরা তাকে তোমাদের পিতার নিকট থেকে নিয়ে গিয়ে একটি কূপে ফেলে দিয়েছে। আবার তিনি ঐ পেয়ালাটিকে অঙ্গুলি দ্বারা আঘাত করেন এবং কিছুক্ষণ তাতে কান লাগিয়ে দিয়ে বলেনঃ “এই পেয়ালাটি বলছে যে, তোমরা নাকি তাঁর গায়ের জামায় মিথ্যা রক্ত মাখিয়ে দিয়ে তা নিয়ে পিতার নিকট আগমন কর এবং তাঁকে বল যে, তাঁর ছেলে ইউসুফকে (আঃ) নেকড়ে বাঘে খেয়ে ফেলেছে।” হযরত ইউসুফের (আঃ) এ কথা শুনে তো তাদের আক্কেল গুড়ুম। তারা তখন পরস্পর বলাবলি করেঃ “হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! গুপ্ত রহস্য তো প্রকাশ হয়ে পড়লো! পেয়ালাটি তো সমস্ত সত্য কথা বাদশাহকে বলে দিলো!” (এটা ইবনু জাবীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আল্লাহ তাআ’লার “তুমি তাদেরকে তাদের এই কর্মের কথা অবশ্যই বলে দেবে, যখন তারা তোমাকে চিনবে না” এই উক্তির তাৎপর্য এটাই।