You are reading a tafsir for the group of verses 11:36 to 11:39
واوحي الى نوح انه لن يومن من قومك الا من قد امن فلا تبتيس بما كانوا يفعلون ٣٦ واصنع الفلك باعيننا ووحينا ولا تخاطبني في الذين ظلموا انهم مغرقون ٣٧ ويصنع الفلك وكلما مر عليه ملا من قومه سخروا منه قال ان تسخروا منا فانا نسخر منكم كما تسخرون ٣٨ فسوف تعلمون من ياتيه عذاب يخزيه ويحل عليه عذاب مقيم ٣٩
وَأُوحِىَ إِلَىٰ نُوحٍ أَنَّهُۥ لَن يُؤْمِنَ مِن قَوْمِكَ إِلَّا مَن قَدْ ءَامَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا۟ يَفْعَلُونَ ٣٦ وَٱصْنَعِ ٱلْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخَـٰطِبْنِى فِى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓا۟ ۚ إِنَّهُم مُّغْرَقُونَ ٣٧ وَيَصْنَعُ ٱلْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌۭ مِّن قَوْمِهِۦ سَخِرُوا۟ مِنْهُ ۚ قَالَ إِن تَسْخَرُوا۟ مِنَّا فَإِنَّا نَسْخَرُ مِنكُمْ كَمَا تَسْخَرُونَ ٣٨ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن يَأْتِيهِ عَذَابٌۭ يُخْزِيهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌۭ مُّقِيمٌ ٣٩
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
3

৩৬-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, যখন নূহের (আঃ) কওম তাদের উপর আল্লাহর শান্তি আনয়নের জন্যে তাড়াহুড়া শুরু করলো তখন আল্লাহ তাআ’লা তাদের উপর বদ দুআ’ করতে হযরত নূহের (আঃ) কাছে ওয়াহী করলেন। তাই হযরত নূহ (আঃ) বললেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কাফিরদের মধ্য হতে যমীনের উপর একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না। হে আমার রব! আমি অপারগ হয়ে পড়েছি, সুতরাং আমাকে সাহায্য করুন।” তখন আল্লাহ তাআ’লা হযরত নূহের (আঃ) কাছে ওয়াহী পাঠালেনঃ যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার কওম হতে আর কেউই ঈমান আনবে না, কাজেই তারা যা করছে তাতে মোটেই দুঃখ করো না। আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার নির্দেশক্রমে নৌকা নির্মাণ কর এবং আমার কাছে এই যালিমদের সম্পর্কে কোন কথা বলো না, তাদের সকলকেই ডুবিয়ে দেয়া হবে। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজনের মতে হযরত নূহকে (আঃ) নির্দেশ দেয়া হয় যে, তিনি যেন কাঠ কেটে তা শুকিয়ে নেন এবং ফেড়ে তক্তা তৈরি করেন। এতে একশ’ বছর কেটে যায়। তারপর পূর্ণরূপে নৌকাটি নির্মাণে আরো এক শ' বছর অতিবাহিত হয়। একটি উক্তি এ- ও রয়েছে যে, নৌকাটি নির্মাণ করতে চল্লিশ বছর লেগেছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। ইমাম মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) তাওরাতের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, নৌকাটি সেগুন কাঠ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। ওর দৈর্ঘ্য ছিল আশি হাত এবং প্রস্ত ছিল পঞ্চাশ হাত। ভিতর ও বাইরে আলকাতরা মাখানো হয়েছিল। নৌকাটি যাতে পানি ফেড়ে চলতে পারে তাতে সেই ব্যবস্থাও রাখা হেয়ছিল। কাতাদা’’র (রঃ) উক্তি এই যে, নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল তিনশ’ হাত। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওর দৈর্ঘ্য ছিল বারো শ’ হাত এবং প্রস্ত ছিল ছ’শ’ হাত। উক্তি এটাও আছে যে, নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল দু’হাজার হাত এবং প্রস্ত ছিল একশ’ হাত। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআ’লারই রয়েছে। নৌকাটির ভিতরের উচ্চতা ছিল ত্রিশ হাত। তাতে তিনটি তলা ছিল। প্রত্যেকটি তলা ছিল দশ হাত করে উঁচু। নীচের তলায় ছিল চতুষ্পদ জন্তু ও বন্য জানোয়ার। মধ্য তলায় মানুষ ছিল। আর উপরের তলায় ছিল পাখী। দরজা ছিল প্রশস্ত এবং উপর থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল।ইমাম আবু জাফর ইবনু জারীর (রঃ) হযরত আবুদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রঃ) হতে একটি ‘গারীব আসার’ (কোন কোন মুহাদ্দিস বলেছেন যে, তাবেয়ীদের হাদীসকে হাদীস না বলে ‘আসার’ বলা হয়। আর যে হাদীসটি কোন এক যুগে বা সর্বযুগে মাত্র একজন লোক বর্ণনা করেছেন ঐ হাদীসকে ‘গারীব’ হাদীস বলা হয়) বর্ণনা করেছেন যে, হাওয়ারীরা হযরত ঈসার (আঃ) নিকট আবেদন করেঃ “যদি আপনি আল্লাহ তাআ’লার নির্দেশক্রমে এমন একজন মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতেন যে ব্যক্তি হযরত নূহের (আঃ) নৌকাটি দেখেছিল, তবে ঐ নৌকাটি সম্পর্কে আমরা জ্ঞান লাভ করতাম!” তাদের কথামত হযরত ঈসা (আঃ) তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে একটি টিলার উপর পৌঁছলেন এবং সেখানকার এক খণ্ড মাটি উঠালেন। অতঃপর তাদেরকে বললেনঃ “এটা কে তা তোমরা জান কি?” তারা উত্তরে বললঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।” তিনি বললেন: “এটা হযরত নূহের (আঃ) পুত্র হা’মের পায়ের গোছা। তারপর তিনি স্বীয় লাঠি দ্বারা ওর উপর আঘাত করে বললেনঃ “আল্লাহর হুকুমে উঠে দাঁড়াও।” তৎক্ষণাৎ একজন বৃদ্ধলোক মাথা থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত ঈসা (আঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন ? “তুমি কি এরূপ বৃদ্ধ অবস্থাতেই মারা গিয়েছিলে?” লোকটি উত্তরে বললেনঃ “জ্বি, না। আমি যুবক অবস্থাতেই মারা গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে যে, কিয়ামাত বুঝি সংঘটিত হয়ে গেছে। তাই ভয়ে আমি বুড়ো হয়ে গেছি।” এরপর ঈসা (আঃ) তাঁকে বললেনঃ “আচ্ছা, হযরত নূহের (আঃ) নৌকা সম্পর্কে যা কিছু জান তা আমাদের নিকট বর্ণনা কর।” তিনি বললেনঃ “নৌকাটি ছিল বারোশ’ হাত লম্বা এবং ওর প্রস্থ ছিল ছ'শ’হাত। তাতে তিনটি তলা ছিল। প্রথমটিতে ছিল চতুষ্পদ জন্তু, দ্বিতীয়টিতে ছিল মানুষ এবং তৃতীয়টিতে ছিল পাখি। যখন চতুষ্পদ জন্তুগুলির গোবর ছড়িয়ে পড়লো তখন আল্লাহ তাআ'লা হযরত নূহের (আঃ) কাছে ওয়াহী পাঠালেনঃ “হাতীর লেজে নাড়া দাও।” তিনি নাড়া দেয়া মাত্রই তা থেকে নর ও মাদী শুকর বেরিয়ে আসলো এবং মলগুলি খেতে লাগলো। ইঁদুরগুলি নৌকার তক্তাগুলি কাটতে শুরু করলে আল্লাহ পাক তাঁর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ “সিংহের দু'চোখের মধ্যভাগে আঘাত কর।” তিনি তাই করলে ওর নাকের ছিদ্র দিয়ে নর ও মাদী বিড়াল বেরিয়ে এসে এই ইদুরের দিকে অগ্রসর হলো।” হযরত ঈসা (আঃ) লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “শহরগুলি যে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে তা হযরত নূহ (আঃ) কি করে জানতে পারলেন?” লোকটি উত্তরে বললেনঃ “তিনি সংবাদ নেয়ার জন্যে কাককে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কাকটি গিয়ে একটি মৃত দেহের উপর বসে পড়ে (সুতরাং সে খবর নিয়ে আসতে খুবই বিলম্ব করে)। সুতরাং তিনি তার উপর বদ দুআ’ করেন যে, সে যেন সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। এ কারণেই সে মানুষের বাড়িতে ভালবাসা পায় না (বরং সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে)। অতঃপর তিনি কবুতরকে পাঠিয়ে দেন। কবুতরটি ঠোঁটে করে যায়তুনের পাতা এবং পায়ে মাটি নিয়ে ফিরে আসে। ফলে তিনি জানতে পারেন যে, শহর ডুবে গেছে। তিনি কবুতরের গলায় গলাবন্ধ পরিয়ে দিলেন এবং তার জন্যে নিরাপত্তার ও প্রীতির দুআ’ করলেন। এ কারণেই সে বাড়িতে ভালবাসা পেয়ে থাকে।” হাওয়ারীরা বললো:“হে আল্লাহর রাসূল! এ লোকটিকে আমাদের সাথে নিয়ে চলুন।” তিনি আমাদের সাথে অবস্থান করবেন এবং আরো কিছু বর্ণনা করবেন। তিনি বললেনঃ “এ লোকটি কি ভাবে তোমাদের সাথে থাকতে পারে? তার তো রিয্‌ক অবশিষ্ট নেই। অতঃপর তিনি লোকটিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ “তুমি যেমন ছিলে তেমনই হয়ে যাও।” সুতরাং তিনি তৎক্ষণাৎ মাটি হয়ে গেলেন।হযরত নূহ (আঃ) নৌকাটি নির্মাণ কার্যে লেগে গেলেন। সুতরাং কাফিররা তাঁকে উপহাস করার একটা সূত্র খুঁজে পেলো। চলতে, ফিরতে, উঠতে, বসতে তারা তাকে ঠাট্টা করতে থাকলো। কেননা, তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী মনে করতো। আর তিনি যে তাদেরকে শাস্তির ভয়। দেখিয়েছিলেন তা তারা মোটেই বিশ্বাস করেনি। তিনি তাদের বিদ্রুপের প্রতিবাদে শুধু এটুকুই বলেছিলেনঃ “আজ তোমরা আমাকে উপহাস করছে, কিন্তু জেনে রেখোঁরেখো যে, যেমন তোমরা আমাদেরকে উপহাস করছে তেমনই একদিন আমরাই তোমাদেরকে উপহাস করবো। সুতরাং তোমরা সত্বরই জানতে পারবে যে, কোন্ ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহর অপমানজনক শাস্তি প্রাপ্ত হয় এবং কার উপর চিরস্থায়ী শাস্তি এসে পড়ে যা কখনো দূর হবার নয়।”