সাবধানীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলঃ ওতে আছে নির্মল পানির নদীমালা,[১] আছে দুধের নদীমালা যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়,[২] আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নদীমালা,[৩] আছে পরিশোধিত মধুর নদীমালা।[৪] আর সেখানে তাদের জন্য আছে বিবিধ ফল-মূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা। সাবধানীরা কি তাদের মত, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; যা তাদের নাড়ী-ভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে? [৫]
[১] آسِنٍ এর অর্থঃ পরিবর্তনীয়। غير آسن এর অর্থঃ অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ, পৃথিবীতে পানি যদি কোন এক স্থানে কিছুক্ষণের জন্য পড়ে থাকে, তবে তার রঙ পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তার গন্ধ ও স্বাদে এমন বিকৃতি ঘটে যে, তা সবাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু জান্নাতের পানির এমন বৈশিষ্ট্য হবে যে, তাতে কোন পরিবর্তন ঘটবে না। অর্থাৎ, তার গন্ধ ও স্বাদ অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকবে। যখনই পান করবে, তখনই তা টাটকা, তৃপ্তিদায়ক ও স্বাস্থ্যকর হবে। পৃথিবীর পানি যেহেতু খারাপ বা নষ্টযোগ্য, তাই এই পানির ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হল, ততক্ষণ পর্যন্ত তা পবিত্র বলে গণ্য হবে, যতক্ষণ না তার রঙ বা গন্ধ পরিবর্তন হবে। কেননা, গন্ধ বা রঙের বিকৃতি ঘটলেই পানি নাপাক হয়ে যায়।[২] দুনিয়াতে উট, গাই, মহিষ ও ছাগলের স্তন থেকে দোহানো দুধ কিছুকাল পরে খারাপ হয়ে যায়; কিন্তু জান্নাতের দুধ যেহেতু কোন পশুর স্তন থেকে এইভাবে নির্গত হবে না, বরং তার নহর থাকবে, সেহেতু সে দুধ যেমন সুস্বাদু হবে, তেমনি তা খারাপ হওয়া থেকেও সুরক্ষিত থাকবে।[৩] পৃথিবীতে যে সুরা বা মদ পাওয়া যায়, তা সাধারণতঃ অত্যন্ত ঝাঁঝালো, বদ-মজাদার ও দুর্গন্ধময় হয়। এ ছাড়া তা পান করে মানুষ সাধারণতঃ বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে, আবোল-তাবোল বকে এবং নিজের দেহের ব্যাপারেও কোন খেয়াল থাকে না। কিন্তু জান্নাতের সুরা দেখতে হবে সুন্দর,স্বাদে হবে অতুলনীয় এবং তা হবে অতীব সুবাসিত। তা পান করে না কোন মানুষ জ্ঞানশূন্য হবে, আর না অস্বস্তি বোধ করবে। বরং এমন তৃপ্তি ও আনন্দ বোধ করবে যে, তা এই দুনিয়াতে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। যেমন, মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, {لا فِيهَا غَوْلٌ وَلا هُمْ عَنْهَا يُنْزَفُونَ} (الصافات:৪৭) "ওতে ক্ষতিকর কিছুই থাকবে না এবং ওতে তারা নেশাগ্রস্তও হবে না।" (সূরা সা-ফফা-ত ৩৭:৪৭ আয়াত)(আরো দেখুনঃ সূরা ওয়াকিআহ ৫৬:১৯ আয়াত)[৪] অর্থাৎ, মধুতে সাধারণতঃ যে সব জিনিসের মিশ্রণ ঘটানোর সম্ভাবনা থাকে; যেমন দুনিয়াতে ব্যাপকহারে দেখা যায়, জান্নাতে এ রকম কোন আশঙ্কা থাকবে না। তা একেবারে নির্মল ও স্বচ্ছ হবে। কারণ, এ মধু দুনিয়ার মত মৌমাছি থেকে সংগৃহীত হবে না। বরং তারও খাস নহর হবে। এই জন্য হাদীসে এসেছে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "যখন তোমরা চাইবে, তখন জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবে। কেননা, তা হল মধ্যবর্তী ও সর্বোচ্চ জান্নাত। সেখান থেকেই জান্নাতের নহরগুলো প্রবাহিত হয় এবং তার উপরে রয়েছে পরম দয়াময়ের আরশ।" (বুখারী, জিহাদ অধ্যায়)[৫] অর্থাৎ, যে জান্নাতে পূর্বে উল্লিখিত সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করবে, সে কি এমন জাহান্নামীদের সমান, যাদের এই অবস্থা হবে? পরিষ্কার কথা যে, এমন হবে না। বরং একজন উন্নত মর্যাদায় থাকবে, আর অপরজন থাকবে জাহান্নামে। একজন জান্নাতের নিয়ামতসমূহে আমোদ-প্রমোদে মেতে থাকবে, আর অপরজন জাহান্নামের শাস্তির কঠিন কষ্ট ভোগ করবে। একজন আল্লাহর অতিথি হবে, যার সম্মানার্থে বিভিন্ন প্রকারের জিনিস প্রস্তুত থাকবে। আর অপরজন আল্লাহর বন্দী হবে, যাকে খেতে দেওয়ার জন্য যাক্কুমের মত তিক্ত ও বদ-মজাদার খাদ্য এবং পান করার জন্য ফুটন্ত পানি দেওয়া হবে।