তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন? [১] আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
[১] মিসত্বাহ, যিনি আয়েশা (রাঃ) -র চরিত্রে অপবাদ রটনার ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন, তিনি একজন গরীব মুহাজির ছিলেন। আত্মীয়তার দিক দিয়ে আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর খালাতো ভাই ছিলেন। এই জন্য তিনি তাঁর তত্তাবধায়ক ও ভরণপোষণের দায়িত্বশীল ছিলেন। যখন তিনিও (কন্যা) আয়েশা (রাঃ) -র বিরুদ্ধে চক্রান্তে শরীক হয়ে পড়েন, তখন আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত হন; আর তা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। সুতরাং পবিত্রতার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর তিনি কসম করে বসলেন যে, আগামীতে তিনি মিসত্বাহকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করবেন না। আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর এই শপথ যদিও মানব প্রকৃতির অনুকূলই ছিল, তবুও সিদ্দীকের মর্যাদা এর চাইতে উচ্চ চরিত্রের দাবীদার ছিল। সুতরাং তা আল্লাহর পছন্দ ছিল না। যার কারণে তিনি এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, যাতে অত্যন্ত স্নেহ-বাৎসল্যের সাথে তাঁর শীঘ্রতাপ্রবণ মানবীয় আচরণের উপর সতর্ক করলেন যে, তোমাদের ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। আর তোমরা চাও যে, মহান আল্লাহ তোমাদের সে ভুল-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেন। তাহলে তোমরা অন্যের সাথে ক্ষমা-সুন্দর আচরণ কর না কেন? তোমরা কি চাও না যে, মহান আল্লাহ তোমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন? কুরআনের এই বর্ণনা-ভঙ্গি এতই প্রভাবশালী ছিল যে, তা শোনার সাথে সাথে সহসা আবু বাকর (রাঃ)-এর মুখ হতে বের হল, 'কেন নয়? হে আমাদের প্রভু! আমরা নিশ্চয় চাই যে, তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর।' এরপর তিনি কসমের কাফফারা দিয়ে পূর্বের ন্যায় মিসত্বাহকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করেন। (ফাতহুল কাদীর, ইবনে কাসীর)