ولكل جعلنا موالي مما ترك الوالدان والاقربون والذين عقدت ايمانكم فاتوهم نصيبهم ان الله كان على كل شيء شهيدا ٣٣
وَلِكُلٍّۢ جَعَلْنَا مَوَٰلِىَ مِمَّا تَرَكَ ٱلْوَٰلِدَانِ وَٱلْأَقْرَبُونَ ۚ وَٱلَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ فَـَٔاتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ شَهِيدًا ٣٣
وَلِكُلٍّ
جَعَلْنَا
مَوَالِیَ
مِمَّا
تَرَكَ
الْوَالِدٰنِ
وَالْاَقْرَبُوْنَ ؕ
وَالَّذِیْنَ
عَقَدَتْ
اَیْمَانُكُمْ
فَاٰتُوْهُمْ
نَصِیْبَهُمْ ؕ
اِنَّ
اللّٰهَ
كَانَ
عَلٰی
كُلِّ
شَیْءٍ
شَهِیْدًا
۟۠

(নারী-পুরুষ) সকলের জন্যই পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আমি উত্তরাধিকারী করেছি।[১] আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ তাদের (প্রাপ্য) অংশ তাদেরকে প্রদান কর। [২] নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।

[১] مَوَالِيْ 'মাওয়ালী' হলمَوْلَى 'মাওলা'র বহুবচন। কয়েকটি অর্থে এটি ব্যবহার হয়। যেমন, বন্ধু, স্বাধীন করা ক্রীতদাস, চাচাতো ভাই এবং প্রতিবেশী। এখানে এর অর্থ হল ওয়ারেস বা উত্তরাধিকারী। অর্থাৎ, প্রত্যেক নারী-পুরুষের ত্যক্ত সম্পদের ওয়ারেস হবে তার পিতা-মাতা এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়রা।

[২] এই আয়াত রহিত, না রহিত নয় এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইবনে জারীর প্রভৃতি মুফাসসিরগণ এটিকে রহিত মানেন না এবং أَيْمَانُكُمْ (অঙ্গীকার বা চুক্তি) বলতে এমন শপথ ও অঙ্গীকারকে বুঝিয়েছেন যা একে অপরের সাহায্যের জন্য ইসলামের পূর্বে দুই ব্যক্তি অথবা দু'টি গোত্রের মধ্যে করা হয়েছে এবং ইসলামের পরেও তা বহাল আছে। نَصِيْبَهُمْ (অংশ) বলতে উক্ত শপথ ও অঙ্গীকার রক্ষা স্বরূপ পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করাকে বুঝানো হয়েছে। আর ইবনে কাসীর এবং অন্য কিছু মুফাসসিরদের নিকট এ আয়াত রহিত। কেননা, أَيْمَانُكُمْ (অঙ্গীকার বা চুক্তি) বলতে তাঁদের নিকট সেই অঙ্গীকার, যা হিজরতের পর আনসারী ও মুহাজির সাহাবাগণের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে হয়েছিল। এতে একজন মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর মালের তাঁর আত্মীয়দের পরিবর্তে ওয়ারেস হতেন, কিন্তু এটা যেহেতু কেবল সাময়িক ব্যবস্থা স্বরূপ ছিল, তাই পরে [وَأُولُوا الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللهِ] "যারা আত্মীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পরের বেশী হকদার।" (আনফালঃ ৭৫) আয়াত নাযিল করে তা রহিত করে দিলেন। [فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ ] (তাদের (প্রাপ্য) অংশ তাদেরকে প্রদান কর) এর অর্থ বন্ধুত্ব, ভালবাসা ও এক অপরের সহযোগিতা; অনুরূপ অসীয়ত স্বরূপ কিছু দেওয়াও এর মধ্যে শামিল। বন্ধুত্বের বন্ধন এবং শপথ, অঙ্গীকার বা চুক্তিবন্ধন অথবা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ফলে ওয়ারেস হওয়ার কথা এখন আর ধারণাই করা যাবে না। আলেমদের একটি দল এ থেকে এমন দুই ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, যাদের কমপক্ষে একজনের কোন ওয়ারেসই নেই। তারা পরস্পর এই চুক্তি করে যে, আমি তোমার বন্ধু। কোন অপরাধ করে ফেললে তুমি আমার সাহায্য করো। আর আমাকে হত্যা করা হলে, আমার রক্তপণ তুমি নিয়ে নিও। ফলে এই ওয়ারেসহীন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার মাল উক্ত ব্যক্তি নিয়ে নেবে। তবে শর্ত হল, সত্যিকারেই যেন তার কোন ওয়ারেস না থাকে। অন্য একদল আলেম আয়াতের আরো এক অর্থ বর্ণনা করেছেন; তাঁরা বলেন, [وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ] (যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ) থেকে স্ত্রী ও স্বামীকে বুঝানো হয়েছে এবং এর সম্পর্ক হল, الأَقْرَبُوْنَ (আত্মীয়-স্বজন) এর সাথে। অর্থ দাঁড়াবে, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ (অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী), তারা যা কিছু ছেড়ে যাবে, তাদের হকদার (ওয়ারেস) আমি নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। অতএব এই হকদারদেরকে তাদের প্রাপ্য অংশ দিয়ে দাও। অর্থাৎ, পূর্বের আয়াতে বিস্তারিতভাবে মীরাসের অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, এখানে সংক্ষিপ্তাকারে তার প্রতি আরো একটু তাকীদ করা হয়েছে।