أنت تقرأ تفسيرًا لمجموعة الآيات 19:34إلى 19:37
ذالك عيسى ابن مريم قول الحق الذي فيه يمترون ٣٤ ما كان لله ان يتخذ من ولد سبحانه اذا قضى امرا فانما يقول له كن فيكون ٣٥ وان الله ربي وربكم فاعبدوه هاذا صراط مستقيم ٣٦ فاختلف الاحزاب من بينهم فويل للذين كفروا من مشهد يوم عظيم ٣٧
ذَٰلِكَ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ ۚ قَوْلَ ٱلْحَقِّ ٱلَّذِى فِيهِ يَمْتَرُونَ ٣٤ مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٍۢ ۖ سُبْحَـٰنَهُۥٓ ۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًۭا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٣٥ وَإِنَّ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۚ هَـٰذَا صِرَٰطٌۭ مُّسْتَقِيمٌۭ ٣٦ فَٱخْتَلَفَ ٱلْأَحْزَابُ مِنۢ بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌۭ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيمٍ ٣٧
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
undefined
٣

৩৪-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ মুস্তফাকে (সঃ) বলছেনঃ হযরত ঈসার (আঃ) ঘটনার ব্যাপারে যে লোকদের মতানৈক্য ছিল, ওর মধ্যে যা সঠিক, তা আমি বর্ণনা করলাম। (আরবী) এর দ্বিতীয় পঠন (আরবী) ও রয়েছে। হযরত ইবনু মাসউদের (রাঃ) কিরআতে (আরবী) রয়েছে। (আরবী) শব্দের (আরবী) 'কে (আরবী) বা পেশ দিয়ে পড়াই বেশী প্রকাশমান। আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তিটিই এর প্রমাণ। তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে সত্য, সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (৩:৬০) হযরত ঈসা (আঃ) যে আল্লাহর নবী ও বান্দা ছিলেন এ কথা বলার পর আল্লাহ তাআলা নিজের সত্তার পবিত্রতা বর্ণনা করছেন। তার মাহাত্মের এটা সম্পূর্ণ বিপরীত যে, তার সন্তান হবে। অজ্ঞ ও যালিম লোকেরা যে এই গুজব রটিয়ে ফিরছে তার থেকে মহান আল্লাহ সম্পূর্ণরূপে পবিত্র এবং তিনি এর থেকে দূরে রয়েছেন। তিনি যে কাজের ইচ্ছা করেন, সে জন্যে তার কোন উপকরণের প্রয়োজন হয় না। তিনি শুধু মাত্র বলেনঃ ‘হও’ আর তেমনই তা হয়ে যায়। একদিকে হুকুম এবং অন্যদিকে জিনিস মওজুদ। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই ঈসার (আঃ) আশ্চর্য অবস্থা আল্লাহর নিকট আদমের (আঃ) আশ্চর্য অবস্থার ন্যায়, তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন, তৎপর তা (রকালবীকে বললেনঃ (সজীব) হয়ে যাও, তখনই তা (সজীব) হয়ে গেলো এই বাস্তব ঘটনা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে; সুতরাং তুমি সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।”হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর কওমকে বললেনঃ আল্লাহই আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তারই ইবাদত করো, এটাই সরল পথ! এটাই আমি আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে নিয়ে এসেছি। যারা এর অনুসরণ করবে তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে এবং যারা এর বিপরীত করবে তারা পথভ্রষ্ট হবে।হযরত ঈসা (আঃ) নিজের সম্পর্কে এইরূপ বর্ণনার পরেও আহলে কিতাবের দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করলো। ইয়াহূদীরা বললো যে, (নাউযুবিল্লাহ) তিনি জারজ সন্তান। তাদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক যে, তারা তার একজন উত্তম রাসূলের উপর জঘন্য অপবাদ দিয়েছে। তারা বলেছে যে, তার এই কথা বলা ইত্যাদি সবই জাদু। অনুরূপভাবে খৃস্টানরাও বিভ্রান্ত হয়ে বলতে শুরু করেছে যে, তিনি তো স্বয়ং আল্লাহ এবং এই কথা আল্লাহরই কথা। অন্যেরা বলেছে যে, তিনি আল্লাহর পুত্র। আরো অন্যেরা বলেছে যে, তিনি তিন মা'বুদের মধ্যে এক মাবদ। তবে একটি দল প্রকৃত ঘটনা মুতাবেক বলেছে যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। এটাই হচ্ছে সঠিক উক্তি। হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে মুসলমানদের আকীদা এটাই। আর মু'মিনদেরকে আল্লাহ তাআলা এই শিক্ষাই দিয়েছেন। বর্ণিত আছে যে, বাণী ইসরাঈলের এক সম্মেলন হয়। তারা চারটি দল। ছাঁটাই করে এবং প্রত্যেক কওম নিজ নিজ আলেমকে পেশ করে। এটা হযরত ঈসার (আঃ) আকাশে উঠে যাওয়ার পরের ঘটনা। এখন চারটি দলের চারজন আলেমের মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে মতানৈক্য হয়। একজন বলে যে, তিনি নিজেই আল্লাহ ছিলেন। তিনি যত দিন ইচ্ছা দুনিয়ায় অবস্থান করেছেন। যাকে ইচ্ছা জীবিত রেখেছেন এবং যাকে ইচ্ছা মেরে ফেলেছেন।তার পর তিনি আকাশে উঠে গেছেন। এই দলটিকে ইয়াকুবিয়্যাত বলা হয়। বাকী তিনটি দলের তিনজন আলেম ঐ আলেমকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করে। তখন ঐ তিন জনের দুজন তৃতীয়জনকে বলেঃ “তোমার ধারণা ও মতামত কি?” সে বললোঃ “তিনি আল্লাহর পুত্র ছিলেন। এই দলটির নাম নাসতুরিয়্যাহ। অবশিষ্ট দুজন ঐ তৃতীয় জনকে বললোঃ “তুমিও ভুল বললে।" অবশিষ্ট দু’জনের একজন অপরজনকে বললোঃ “তুমি তোমার মতামত পেশ কর।” সে বললোঃ “আমার তো আকীদা এই যে, তিনি তিন মাবুদের এক মাবুদ। এক মা’দ আল্লাহ, দ্বিতীয় মাবুদ এই ঈসা (আঃ) এবং তৃতীয় মা'বুদ তাঁর মাতা মারইয়াম (আঃ)।" এই দলটির নাম ইসরাঈলিয়্যাহ। আর দলটিই ছিল খৃস্টানদের বাদশাহ। তাদের সবার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক। চুতর্থ জন বললোঃ “তোমরা সবাই মিথ্যাবাদী। হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল। তিনি ছিলেন আল্লাহর কালেমা এবং তারই নিকট হতে প্রেরিত আল্লাহর রূহ।” এই দলটি মুসলমান। আর এরাই ছিল সঠিক পথের অনুসারী। তাদের মধ্যে যার অনুসারী যে দল ছিল সেই দল তার উক্তির উপরই চলে গেলো এবং তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহ শুরু করে। দিলো। সর্বযুগে মুসলমানদের সংখ্যা কম থাকে বলে ঐ সব দল মুসলমানদের উপর বিজয় লাভ করলো। আল্লাহ তাআলার উক্তির তাৎপর্য এটাই যে, তারা এমন লোকদেরকে হত্যা করতো মানুষের মধ্যে যারা ন্যায়ের আদেশ করতো।ঐতিহাসিকদের বর্ণনা এই যে, বাদশাহ কুতুনতীন তিনবার খৃস্টানদের একত্রিত করে। শেষ বারের সম্মেলনে তাদের দু' হাজার এক শ’ সর জন আলেম একত্রিত ছিল। কিন্তু তারা সবাই হযরত ঈসার (আঃ) ব্যাপারে বিভিন্ন মতাবলম্বী ছিল। এক শ' জন এক কথা বললে সত্তর জন অন্য কথা বলে। পঞ্চাশ জন আরো অন্য কিছু বলে। ষাট জনের আকীদা অন্য। প্রত্যেকের মত একে অপরের বিপরীত ছিল। সবচেয়ে বড় দলটির লোক সংখ্যা ছিল তিনশ ষাট। বাদশাহ এই দলের লোক সংখ্যা বেশী দেখে এই দলভুক্ত হয়ে যায়। রাজ্যের মঙ্গল এতেই ছিল। সুতরাং তার রাজনীতি তাকে এই দলের প্রতিই মনোযোগী করলো। সে অন্যান্য সমস্ত দলকে বের করে দিলো। আর এদের জন্যে সে ‘আমানাতে কুবরা এর প্রথা আবিষ্কার করলো। প্রকৃত পক্ষে এটাই হচ্ছে জঘন্যতম খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা। এখন ঐ আলেমদের দ্বারা সে শরীয়তের মাসআলার কিতাবগুলি লিখিয়ে নিলো। আর রাজ্যের বহু রীতি-নীতি এবং শহরের জরুরী বিষয়গুলি শরীয়তরূপে তার মধ্যে দাখিল করে দিলো। সে অনেক কিছু নতুন নতুন বিষয় আবিষ্কার করলো। এভাবে প্রকৃত দ্বীনে মাসীহর রূপ পরিবর্তন করে একটা সংমিশ্রিত দ্বীন তৈরী করলো। আর জনগণের মধ্যে ওটা আইন রূপে চালু করে দিলো। তখন থেকে দ্বীনে মাসীহ বলতে এটাকেই বুঝায়। ওটার উপর যখন সে সকলকে সম্মত করে ফেললো, তখন চতুর্দিকে গীর্জা ও ইবাদতখানা নির্মাণ করা এবং ওগুলিতে আ'লেমদেরকে বসিয়ে দিয়ে তাদের মাধ্যমে ঐ নব সৃষ্ট মাসীহিয়্যাতকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগে গেল। সিরিয়ায়, জাযীরায় এবং রোমে প্রায় বারো হাজার এইরূপ ঘর তার যুগে নির্মিত হয়। যে জায়গায় শূল তৈরী করা হয়েছিল সেখানে তারা মাতা হায়লানা একটা গম্বুজ তৈরী করিয়ে নিয়েছিল। নিয়মিতভাবে ওর পূজা শুরু হয়ে যায় এবং সবাই বিশ্বাস করে নেয় যে, হযরত ঈসাকে (আঃ) শূলে চড়ানো হয়েছে। অথচ তাদের এ উক্তিটি সম্পূর্ণ ভুল। আল্লাহ তাআলা তাকে নিজের পক্ষ থেকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। এটাই হলো খৃস্ট ধর্মের সংক্ষিপ্ত নমুনা।যারা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং সন্তান ও শরীক স্থাপন করে তারা দুনিয়ায় হয়তো অবকাশ লাভ করবে, কিন্তু ঐ ভীষণ ভয়াবহ দিনে চতুর্দিক থেকে তাদের উপর ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা শুরু হয়ে যাবে এবং তারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা স্বীয় অবাধ্য বান্দাদেরকে তাড়াতাড়ি শাস্তি দেন না বটে, কিন্তু তাদেরকে একেবারে ছেড়েও দেন না।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যালিমকে অবকাশ দেন, কিন্তু যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন তার কোন আশ্রয় স্থল বাকী থাকে না।" একথা বলার পর তিনি কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন।(আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও করার পন্থা এরূপই যে, যখন কোন অত্যাচারী গ্রামবাসীকে পাকড়াও করেন ,তখন নিশ্চিত জানবে যে, তার পাকড়াও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক।" (১১:১০২)সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অপছন্দনীয় কথা শুনে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক ধৈর্যশীল আর কেউই নেই। মানুষ তার সন্তান স্থাপন করে, তথাপি তিনি তাদেরকে রিযক দিতেই রয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে রেখেছেন। আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অনেক গ্রামবাসীকে, তারা অত্যাচারী হওয়া সত্ত্বেও আমি অবকাশ দিয়েছি, তারপরে তাদেরকে পাকড়াও করেছি, শেষে তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে।" (২২:৪৮) অন্য জায়গায় তিনি বলেছেনঃ “অত্যাচারী লোকেরা যেন তাদের আমলের ব্যাপারে আল্লাহকে উদাসীন ও অমনোযোগী মনে না করে। তাদেরকে তিনি অবকাশ দিচ্ছেন ঐ দিনের জন্যে, যেই দিন চক্ষু উপরের দিকে উঠে যাবে।” ঐ কথা তিনি এখানেও বলছেনঃ এই কাফিরদের এক মহা দিবসের আগমনে ভীষণ দুর্দশা রয়েছে।হযরত উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ এক, তার কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল এবং তাঁর কালেমা যা তিনি মারইয়ামের (আঃ) প্রতি নিক্ষেপ করেছিলেন এবং তিনি তাঁর রূহ; আরো সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, তার আমল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবিষ্ট করবেন। (এ হাদীসটি বিশুদ্ধ। এর বিশুদ্ধ তার ব্যাপারে সবাই একমত)